শরতের নীল আকাশ, চারদিকে সবুজের মোহময় হাতছানি-শরতের এমন নয়নাভিরাম আবহে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে মৌলভীবাজার। শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সাজছে দেশের চায়ের রাজধানী। প্রতি বছরের মতো এবারও পূজার ছুটির সেরা গন্তব্য হয়ে উঠছে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার।
পাহাড়, ঝরনা আর বিস্তৃত চা-বাগানে ঘেরা এই জেলা এবারও পূজার ছুটিতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণয় মুখর হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে হোটেল-রিসোর্ট মালিক ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা নিচ্ছেন নানা প্রস্তুতি। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে অর্ধশতাধিক দর্শনীয় স্থান। এরমধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর, হামহাম ঝরনা, আদমপুর ইকোপার্কসহ একাধিক স্পটে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। পূজার ছুটিতে এসব জায়গায় বাড়তি ভিড় আশা করছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। শুধু পর্যটনকেন্দ্র নয়, জেলার সব হোটেল-রিসোর্টও ইতোমধ্যে অতিথি বরণে প্রস্তুত হয়ে উঠেছে।
অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্টের পরিচালক ফায়কুজ্জামান বাদশা বলেন, পূজার ছুটিতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কক্ষ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। স্থানীয় গাইড, ট্রাভেল এজেন্সি ও পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরাও পর্যটকদের সেবা দিতে তৈরি। শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে মৌলভীবাজারে পর্যটকের চাপ বাড়বে। আমাদের রিসোর্টে বুকিং আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে। দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ছাড়াও নিরাপত্তা ও সেবার মান বাড়ানো হয়েছে। আমরা চাই, এখানে আসা পর্যটকরা যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে স্বস্তিদায়ক সময় কাটাতে পারেন।
কমলগঞ্জের ভানুবিল মাঝের গাঁও মনিপুরী কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম মাঙাল ময়ুমের উদ্যোক্তা নিরঞ্জন সিংহ বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা আমাদের জন্য শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি পর্যটন মৌসুমও বটে। ভানুবিল মাঝের গাঁওয়ে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আমাদের মনিপুরী সংস্কৃতি, নাচ-গান, হস্তশিল্প ও খাবারের সঙ্গে পরিচিত হন। এ সময় স্থানীয় নারীরা বুননকাজ, যুবকরা নাচ-গান আর সবাই মিলে অতিথিদের আপ্যায়নে অংশ নেন। এতে যেমন আমাদের সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি গ্রামের মানুষও বাড়তি আয় করার সুযোগ পান।
কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের মাধ্যমে দুর্গাপূজার সময়ে আমাদের গ্রামে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। স্থানীয়রা পর্যটকদের সেবা দিয়ে উপার্জনের সুযোগ পান। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়, আর পর্যটকরা প্রকৃতি ও সংস্কৃতি দুটোর স্বাদ একসঙ্গে নিতে পারেন।
প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ আরফিন হোসাইন বলেন, দুর্গাপূজার ছুটিকে ঘিরে আমাদের রিসোর্টের সব কক্ষ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। অতিথিরা যেন আরামদায়ক সময় কাটাতে পারেন, সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এবার পূজার ছুটিতে আমাদের হোটেল পুরোপুরি হাউজফুল। অনেকেই আগেই বুকিং নিশ্চিত করেছেন। আমরা অতিথিদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত। আমরা চাই, মৌলভীবাজারে এসে তারা যেন আতিথেয়তা ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরতে পারেন।
শ্রীমঙ্গল জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে মৌলভীবাজারে পর্যটকের ভিড় বাড়বে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল ও হেল্পডেস্ক থাকবে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজ করব। দুর্গাপূজাকে ছুটিকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় সামলাতে ট্যুরিস্ট পুলিশ বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা চাই পর্যটকরা যেন স্বস্তি ও আনন্দ নিয়ে সময় কাটাতে পারেন।
ওমর ফারুক নাঈম/এনএইচআর