দেশজুড়ে

পর্যটক-দর্শনার্থীতে লোকারণ্য কক্সবাজার

দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক মিলিয়ে টানা ছুটিতে পর্যটক-দর্শনার্থীতে লোকারণ্য কক্সবাজার। টানা এ ছুটিতে পর্যটন নগরীতে পাঁচ লাখের বেশি পর্যটক উপস্থিতির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত হতে বুধবার (১ অক্টোবর) দুপুর, বিকেল এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সিডিউল অনুসারে কক্সবাজার পৌঁছান ভ্রমণপ্রেমীরা। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সের পর্যটকে লোকারণ্য হয় সৈকতের বেলাভূমি ও পর্যটন স্পটগুলো। তবে, সন্ধ্যার আগে আগে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে ভোগান্তিতে পড়েন পর্যটক-দর্শনার্থীরা।

শরতের ঠান্ডা-গরম আবহাওয়ায় সূর্যাস্ত দেখা ও সাগরের নোনা জলে গোসলে নামতে সব বয়সের মানুষ সৈকত ও বেলাভূমিতে নামে। ভিড় জমে হোটেল-মোটেল জোনের অলিগলি রাস্তায়। দীর্ঘদিন পর তিল ধারণের ঠাঁই নেই অবস্থা কক্সবাজারে। পর্যটকবাহী ও সাধারণ পরিবহন এবং ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশায় বাইপাস সড়ক, কলাতলী ডলফিন মোড়, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী, শৈবাল সড়ক- সবখানেই তীব্র যানজট লাগছে। কোনো কোনো সড়কে মানুষের জটও হয়েছে। বড় বাসগুলো টার্মিনাল এলাকায় থাকলেও মাঝারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি পর্যটন এলাকা ও শহরে প্রবেশ করায় এ যানজট বলে অভিমত স্থানীয়দের।

এদিকে, টইটম্বুর কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। মাঠে টহল দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, টানা ছুটিকে টার্গেট করে পূর্বপরিকল্পনায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন। কেউ এসেছেন মঙ্গলবার রাতে, আবার কেউ বুধবার সকাল, বিকেল ও রাতে। সপ্তাহ–পক্ষকাল আগে থেকেই আগাম বুকিং হয়ে আছে পর্যটনকেন্দ্রিক পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে স্পটগুলো। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে তথ্যকেন্দ্রগুলোতে।

গোসলকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। এরপরও পর্যটকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছেন জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।

চট্টগ্রামের পটিয়ার হাইদগাঁও এলাকা থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসা হোসাইনুল ইসলাম বলেন, প্রবাস থেকে সপ্তাহখানেক আগে ফিরেছি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি তারকা হোটেলে উঠেছি। পুরো হোটেলেই পর্যটক ভর্তি।

হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল বলেন, এবারের মৌসুমটা বন্ধ দিয়ে শুরু হয়েছে। মৌসুমে নিত্যদিন পর্যটক উপস্থিতি থাকে। দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছেন। পেছনের ক্ষতি কাটাতে এভাবে পুরো মৌসুম ভর্তি থাকুক—এমনটিই আমাদের কাম্য।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিল্কী বলেন, শুধু কক্সবাজার নয়, ইনানী–হিমছড়িসহ সব পর্যটন স্পটে পর্যটক বেড়েছে। মৌসুমের যাত্রাটা আশান্বিত করেছে।

কলাতলীর সি নাইট গেস্ট হাউসের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, হোটেল-মোটেলের প্রায় আবাসনে লোকসমাগম হয়েছে।সি সেইফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, বিশ্ব পর্যটন দিবস হতে এবার পর্যটক আগমন ঘটেছে। এ ধারা আগামী শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে মনে করি। প্রতিদিন সকাল থেকেই ঢেউয়ের সঙ্গে খেলছেন পর্যটকরা। নিরাপদে থাকতে তাদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান বলেন, মঙ্গলবার থেকেই সৈকতের সব পয়েন্টে লোকসমাগম বেড়েছে। তবে, সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে পর্যটক সমাগম একটু বেশি। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে তথ্যকেন্দ্র আছে। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মাঠে ভ্রাম্যমাণ আদালত রয়েছে।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন শাহীন বলেন, বাড়তি পর্যটক ও দর্শনার্থী মাথায় রেখে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক রয়েছি। অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ঘটনা রোধে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও পুলিশের নারী সদস্যরা কাজ করছে। টহলে র‍্যাব সদস্যরাও রয়েছেন।

সায়ীদ আলমগীর/এএইচ/জিকেএস