আন্তর্জাতিক

বৈশ্বিক গেমিং অর্থনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠছে সৌদি আরব

বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব এখন দ্রুত রূপ নিচ্ছে ভিডিও গেম শিল্পের এক নতুন পরাশক্তিতে। বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে দেশটি গড়ে তুলছে এমন এক সাম্রাজ্য, যা শিগগিরই বৈশ্বিক গেমিং অর্থনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

ফরাসি গেম নির্মাতা ইউবিসফট সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে জনপ্রিয় গেম অ্যাসাসিনস ক্রিড এর নতুন সংস্করণে যুক্ত হচ্ছে সৌদি আরবের ঐতিহাসিক শহর আল-উলা। এটি দেশটির প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক ভিডিও গেমে সরাসরি অংশগ্রহণের উদাহরণ। ইউবিসফট জানায়, গেমটির উন্নয়নে সৌদি রাষ্ট্রায়ত্ত স্যাভি গেম গ্রুপ সহযোগিতা করছে।

এর মধ্যেই আরও বড় চমক আসে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে, যখন সৌদি আরবের সার্বভৌম তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) নেতৃত্বাধীন এক কনসোর্টিয়াম ৫৫ বিলিয়ন ডলারে মার্কিন গেম নির্মাতা ইলেকট্রনিক আর্টসকে অধিগ্রহণের ঘোষণা দেয়। এই চুক্তির মাধ্যমে ফিফা, দ্যা সিমস ও ম্যাডেন এনএফএল এর মতো বিশ্বখ্যাত গেম ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা এখন সৌদি আরবের হাতে।

পিআইএফ এরই মধ্যে স্যাভি গেমস গ্রুপকে দিয়েছে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের তহবিল, যার লক্ষ্য দেশটিকে গেমিং শিল্পের বৈশ্বিক কেন্দ্র বানানো।

২০২৫ সালে তারা অধিগ্রহণ করে নিআনটিক–এর গেমিং ইউনিট, যারা পকিমন গো তৈরি করেছিল। এছাড়া টম রাইডার নির্মাতা এমব্রেসার গ্রুপেও তাদের বড় বিনিয়োগ রয়েছে।

পিআইএফ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় গেম কোম্পানিগুলোর অন্যতম বিনিয়োগকারী—এর মধ্যে রয়েছে জাপানের নিনটেনডো, ক্যাপকম ও স্কয়ার এননিক্স। দক্ষিণ কোরিয়ার নেক্সন ও এনসিএসঅফট। যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাক টু-ইন্টারেক্টিভ। এসব প্রতিষ্ঠানে সৌদির বিনিয়োগের পরিমাণ ১১.৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

স্যাভি গেমসের প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান ওয়ার্ড বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো ডিজনির মতো একটি কোম্পানি তৈরি করা—তবে সেটি হবে গেমিং ও ই-স্পোর্টসের জন্য।

এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে এসএল ও ফ্যাসিইট নামে দুই শীর্ষ ই-স্পোর্টস কোম্পানি কিনে নেয় ১.৫ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমানে সৌদি আরবের দখলে রয়েছে বিশ্বের ৪০ শতাংশ ই-স্পোর্টস বাজার।

সৌদি আরব গত দুই বছর ধরে আয়োজন করছে ইস্পোর্টস ওয়ার্ল্ড কাপ। যেখানে অংশ নিচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ গেমাররা।

২০২৫ সালের আসরে বিক্রি হয় ২.৫ লাখ টিকিট, আর অনলাইনে দেখা হয় ৭৫০ মিলিয়ন বার। আগামী বছর দেশটি আয়োজন করবে এস্পোর্টস ন্যাশনস কাপ, যা প্রতি দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হবে।

তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে সৌদি সরকার ভিশন ২০৩০ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গেমিং খাতে ৩৯ হাজার চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়েছে।

নারীদের গেম ডিজাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে প্রিন্স নউরাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

গেমিং, চলচ্চিত্র, ক্রীড়া ও বিনোদন খাতে সৌদি বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য শুধু অর্থনৈতিক নয়—বরং দেশটির আধুনিক ও প্রযুক্তিমুখী ভাবমূর্তি বিশ্বে তুলে ধরা।

স্যাভি গেমসের প্রধান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের হাজার বছরের ইতিহাসে অসংখ্য গল্প আছে—যেগুলো গেমের মাধ্যমে বিশ্বকে জানানো যায়। এটাই আমাদের বড় সুযোগ।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, সৌদি মালিকানা কি গেমগুলোর বিষয়বস্তু প্রভাবিত করবে? ইএ–এর প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রু উইলসন অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন—আমাদের সাহসী ও সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি অপরিবর্তিত থাকবে।

এমএসএম