শরৎ মানেই নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। মাঠজুড়ে কাশবনের রাজত্ব। এ সময়ে মাঠের কোণে কিংবা নদীর তীরে দুলতে থাকা কাশফুলে হারিয়ে যেতে মন চায়। গ্রামবাংলায় সহজেই কাশফুলের দেখা মেলে। ঢাকার ব্যস্ত শহরে সেই দৃশ্য তেমন একটা পাওয়া যায় না। তবুও নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কাশফুলের দেখা মেলে। ঢাকার কাশফুল মানেই উত্তরা, আফতাবনগর, মিরপুর এবং মোহাম্মদপুরের কিছু স্থান। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঢাকার কাশফুল সম্পর্কে।
রাজধানীর আশকোনার একেবারে কাছেই বিস্তৃত আসিয়ান সিটি। যদিও এটি মূলত একটি আবাসন প্রকল্প। তবুও ফাঁকা পড়ে থাকা প্লটজুড়ে কাশফুলের মনোরম দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। নর্দান ইউনিভার্সিটির সামনের রাস্তা ধরে ভেতরে প্রবেশ করলেই দু’পাশে সারি সারি কাশফুল চোখে পড়ে। রাস্তার পূর্বদিকের খোলা জমিতে বিস্তীর্ণ কাশফুল যেন সাদা ঢেউয়ের মতো দুলতে থাকে।
বিকেলের স্নিগ্ধ হাওয়ায় পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরে বেড়ালে শহরের ভিড়ভাট্টা ভুলে গ্রামীণ পরিবেশের এক টুকরো স্বাদ পাওয়া যায়। তাই কম সময়ে প্রকৃতির কোলে ডুব দিতে চাইলে আসিয়ান সিটি হতে পারে আপনার জন্য অনন্য গন্তব্য। ঢাকার বিমানবন্দরের কাওলা এলাকা থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় সহজেই কাশবনে যেতে পারবেন।
মিরপুরের বৃন্দাবনমিরপুর-১২ নম্বর ডিওএইচএস সংলগ্ন বৃন্দাবন মাঠ এখন কাশফুলপ্রেমীদের ভিড়ে সরগরম। সাদা কাশফুলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে মনে হয় যেন মেঘের ভেতর হারিয়ে গেছি। এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং একান্ত সময় কাটাতে প্রতিদিনই নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। মাঠের পাশে আছে নাগরদোলা, ফুচকা, চটপটি আর নানা ধরনের স্ট্রিট ফুডের আয়োজন।
ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফাররা মাত্র ১০-২০ টাকার বিনিময়ে স্মৃতিময় ছবি তুলে দেন। সন্ধ্যার পর জায়গাটি ফাঁকা হয়ে যায়। তাই ঘুরতে চাইলে সন্ধ্যার আগেই ফেরাটা সবচেয়ে ভালো। মিরপুর ডিওএইচএস সংলগ্ন সরু ঢালু পথ ও বাঁশের সাঁকো পার হয়েই কাশবনে পৌঁছতে হয়। চাইলে দিয়াবাড়ি থেকেও এখানে আসা যায়।
তিনশ ফিট সড়করাজধানীর কুড়িলের তিনশ ফিটের সড়কে কাশফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। দুপাশে ফুড কোর্ট ও আড্ডার জন্য জায়গা আছে। পাশেই বালু নদ। যা এখন জনপ্রিয় গন্তব্য। বিকেলের দিকে কাশফুলের মাঝে হেঁটে বেড়ানো এবং রাতে ফুড কোর্টে আড্ডাই আনন্দের অংশ।
আরও পড়ুন
কাপ্তাই হ্রদের বুকে এক টুকরো দ্বীপ কাট্টলীকাপাসিয়ায় পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা
এর বিশেষ আকর্ষণ হলো নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস। এ ছাড়া বারবিকিউ, বিভিন্ন ধরনের চা এবং বালু নদে নৌকাভ্রমণও বিশেষ আনন্দের অভিজ্ঞতা যোগ করে। ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে কুড়িল চৌরাস্তায় এসে সিএনজি, বাস বা মোটরসাইকেলে সহজেই যেতে পারবেন তিনশ ফিট সড়কে।
আফতাবনগররামপুরা ব্রিজ থেকে উত্তর দিকে সামান্য এগোলেই আফতাবনগর। এখানে খোলা মাঠে কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পাশাপাশি হাঁসের মাংস, চালের রুটি, ফুচকা, চটপটি, পানিপুরি, চা, কফি এবং চানাচুর মাখা আনন্দ আরও দ্বিগুণ করে। বিকেলের আড্ডা বা ছবি তোলার জন্য জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়। রামপুরা ব্রিজ থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় সহজেই কাশবনে যেতে পারবেন।
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধমোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের তীরে ছড়িয়ে আছে কাশবন। বিকেলের দিকে নদীর হাওয়া আর কাশফুলের কোমল মায়া অন্যরকম শান্তি ছড়িয়ে দেয়। নিরিবিলি পরিবেশের কারণে ঢাকার নানা জায়গা থেকে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকেই একান্ত সময় কাটান। ঢাকার যে কোনো জায়গা থেকে বাসে মোহাম্মদপুর বাসস্টেশন আসতে হবে। সেখান থেকে রিকশায় বেড়িবাঁধ যাওয়া যায়।
উত্তরার দিয়াবাড়িউত্তরার দিয়াবাড়ির কাশফুলের সাদা গালিচা যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে একাকার। কংক্রিটের শহর থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনকে প্রকৃতির কাছে সমর্পণ করার এক অনন্য সুযোগ। শিশুদের জন্য আছে কিছু রাইড। জলাশয়ে নৌকাভ্রমণের সুযোগও পাবেন। সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ খাবারের ব্যবস্থা তো থাকছেই। উত্তরার হাউজ বিল্ডিং থেকে রিকশা বা অটোতে চড়ে যেতে পারবেন দিয়াবাড়ি।
এসইউ/এমএস