দেশজুড়ে

সম্মেলনের দুই মাসেও হয়নি কমিটি, কার্যক্রমে অচলাবস্থা

নতুন নেতৃত্ব এলে আসলে দলের কার্যক্রমে বাড়তি গতি আসবে এমন প্রত্যাশা নিয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সম্মেলন হলেও কমিটি ঘোষণা করা যায়নি। প্রায় দুই মাস আগে হওয়া এ সম্মেলনে পূর্বের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এতে কার্যত অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে নগর বিএনপিতে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আহ্বায়ক কমিটি দ্বারা পরিচালিত রাজশাহী মহানগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত ১০ আগস্ট। এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই দিনই নতুন নেতৃত্ব পাওয়ার আশা ছিল স্থানীয় নেতাকর্মীদের। তবে সম্মেলন থেকে নতুন কমিটি ঘোষণা হয়নি। ওই দিন রাতে আগের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর এরশাদ আলী ঈশাকে আহ্বায়ক ও মামুন অর রশিদ মামুনকে সদস্যসচিব করে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির কার্যক্রম নিয়ে দলের ভেতরের একটি অংশ আপত্তি জানিয়ে আসছিল। কমিটিতে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব ও মতবিরোধের কারণে দলের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি কার্যালয়ে তালা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও দলের একাংশ নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

আরও পড়ুন:দেড় দশক পর সম্মেলন, নতুন কমিটি না করে পুরোনো কমিটি বাতিলনবীন না প্রবীণ কারা আসছে রাজশাহী নগর বিএনপির নেতৃত্বে

শেষে ১০ আগস্ট সম্মেলনের কিছুক্ষণ পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুরোনো কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগের দুই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম (আলীম) ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান (চন্দন) দায়িত্বে থাকবেন বলে জানানো হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়কারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মহানগর বিএনপিতে কমিটি গঠন না করে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দলের ভেতর বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য পুনর্গঠন না হলে আগামীতে কার্যক্রমে আরও বিভ্রাট দেখা দিতে পারে।

রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, খুব দ্রুত সময়ে কমিটি হয়ে যাবে বলে শুনছি। তবে দলের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে এমনটি নয়। আমরা কাজ করছি। সেক্ষেত্রে আমরা কিন্তু কমিটি পেলে একটু বেশি গতিশীল হব। আমরা যারা প্রার্থী আছি তারা চাই দ্রুত কমিটি হোক। হয় সম্মেলন করে কিংবা ঢাকা থেকে যে ভাবেই হোক এটি যাতে দ্রুত হয়।

মহানগর ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইটও এবারের নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রত্যাশী। তিনি বলেন, সম্মেলনে কত লাভ হলো তত ক্ষতি হলো সেটা বলা যাবে না। আমি যতটুকু জানি সম্মেলন হয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দায়িত্ব নিয়েছেন। কমিটি যেন সুন্দর ও সঠিক হয়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এটা নিয়ে কাজ করছেন। আগামীতে যারা দায়িত্বে আসবেন তাদের খোঁজখবর-চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানি।

তিনি আরও বলেন, মহানগর নেতৃবৃন্দ সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি। এ কারণে কাউন্সিল করতে পারেননি। সম্মেলনটা ঠিক হয়েছে, তবে কাউন্সিল হয়নি। যেহেতু কাউন্সিল করতে পারেননি সেটা কেন্দ্র গেছে, কেন্দ্র থেকে যাচাই বাছাই করে দিবে। ব্যর্থ হয়েছি আমরা রাজশাহীর নেতৃত্বে। এখন ব্যক্তির দায় যদি অন্য কাউকে চাপানো হয় সেটা যেমন সঠিক হবে না। কমিটি দিতে দেরি হচ্ছে কেন সেটা খোঁজাও ঠিক হবে না।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্বে আছেন, উনি যখন ঘোষণা দেবেন তখনই হবে। হয়ত সময় পাচ্ছেন না সেজন্য দেরি হচ্ছে। তবে হয়ে যাবে শীঘ্রই। কমিটি না থাকার কারণে কিছু কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমরা যখন পোস্টে ছিলাম সবাইকে ডাকতে পারতাম। এখন সেভাবে ডাকতে পারছি না। যে কারণে মহানগরীর কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সাংগঠনিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে পড়াটা স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশ্ন জাগছে কবে কমিটি হবে। এখন আমাদের মাঠে থাকার কথা। সেভাবে আমরা থাকতে পারছি না। তবে আমরা বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছি।

এ বিষয়ে জানতে কমিটি না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগের দুই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। তাদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এমএন/জেআইএম