দেশজুড়ে

বিএনপিতে আছে পিন্টু, চমক দেখাতে চায় জামায়াত-গণঅধিকার

ভূঞাপুর-গোপালপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-২ আসন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরইমধ্যে প্রচারে নেমেছেন এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিজ নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক, কর্মিসভা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন তারা। পাশাপাশি যে যেমন পারছেন ক্লাব, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে আর্থিক অনুদান দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এ আসনে হেভিওয়েট ও শক্তিশালী প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু। তবে চমক দেখাতে চান তরুণ প্রার্থী গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক ও উচ্চতর সদস্য শাকিল উজ্জামান।

আরও পড়ুন- দলীয় কোন্দলে বিএনপি, সরব জামায়াতের প্রার্থীআব্দুর রাজ্জাকের আসন পেতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত

টাঙ্গাইল-২ আসনে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ৬ বার, বিএনপি ৪ বার, জাতীয় পার্টি একবার ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (সিরাজ) একবার জয়লাভ করেছে। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাতেম আলী তালুকদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে আফাজ উদ্দিন ফকির নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির শামছুল হক তালুকদার ছানু এবং ১৯৮৮ সালে জাসদের আব্দুল মতিন হিরু নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাতেম আলী তালুকদারকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পিন্টু নির্বাচিত হলেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সাবেক সচিব খন্দকার আসাদুজ্জামান আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে আব্দুস সালাম পিন্টু ফের এ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

এরপর ২০০৮ সাল ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খন্দকার আসাদুজ্জামান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তানভীর হাসান ছোট মনির সংসদ সদস্য হিসেবে এই আসনে দায়িত্ব পালন করেন।

এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪ হাজার ২৭১ জন। নিবন্ধিত নতুন ভোটার ১৮ হাজার ৬৩৫ জন।

আরও পড়ুন- বিএনপির ঘাঁটিতে জয়ের স্বপ্ন জামায়াতেরজামায়াতসহ ৫ দলে একজন করে প্রার্থী, বিএনপিতে ছড়াছড়ি

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু। তিনি প্রায় ১৭ বছর পর কারাভোগ শেষে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর মুক্তি পান। এ আসনে বিএনপির একক শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে একক প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর টাঙ্গাইল জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা হুমায়ুন কবির কাজ করছেন। এছাড়া গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী হিসেবে দলটির দপ্তর সম্পাদক ও উচ্চতর সদস্য শাকিল উজ্জামান কাজ করছেন।

স্থানীয়রা বলেন, বিগত সময়ে এ আসনে উন্নয়ন হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল ব্যাপক। এবার শুধু কথায় নয়, কাজের মিল থাকবে এমন প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবেন। যাকে তারা সার্বক্ষণিক পাশে পাবেন এবং জনগণের খোঁজ খবর রাখবেন- এমন একজনকে প্রত্যাশা করেন তারা।

আরও পড়ুনআ’লীগের ঘাঁটিতে বিএনপির কোন্দল, সুবিধা পেতে পারে জামায়াতপ্রবাসে বিএনপির ওসমান ফারুক, মাঠে সরব জামায়াতের জেহাদ খান

ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আব্দুস ছালাম পিন্টু মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ১৭ বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছেন। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি দলকে সুসংগঠিত করছেন। এলাকার মানুষের মধ্যে আবেগ সৃষ্টি হয়েছে। একক প্রার্থী হিসেবে তিনি ভূঞাপুর ও গোপালপুরে জনসংযোগ চালাচ্ছেন। তিনি বেশ কয়েকবার এই আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন। আশা করছি আসন্ন নির্বাচনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছেন। দল তাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনটি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে উপহার দিতে পারবো।’

গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী লিয়াকত জাগো নিউজকে বলেন, ‘অন্যান্য উপজেলা থেকে গোপালপুর উপজেলা বিএনপি পিন্টুর কারণে সুসংগঠিত। তিনি বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন৷ তার কারণে এ উপজেলায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ নেই। আশা করছি তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবারো মন্ত্রী হবেন।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হুমায়ুন কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সহনশীলতা, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত হতে হবে। উন্নয়নের প্রথম শর্ত হচ্ছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। সহনশীল মনোভাব দরকার। জাতি নতুন কিছু ও পরিবর্তন চাচ্ছে। বিগত সময়ে এ আসন থেকে জামায়াতের কোনো প্রার্থীই নির্বাচিত হতে পারেনি। তবে এবার আশা করছি নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু হলে আমি বিজয়ী হবো।’

গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘যখন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তিগুলোও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে সাহস পায়নি তখন আমরা তরুণরাই প্রতিরোধের মশাল জ্বালিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম। এই আপসহীন সংগ্রামের পথে আমাদের অনেককে জেল, জুলুম এবং এমনকি গুমের নির্মম শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু কোনো দমন-পীড়নই আমাদের রাজপথ থেকে সরাতে পারেনি। গণঅধিকার পরিষদ মূলত তারুণ্যের একটি রাজনৈতিক দল। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, এই অদম্য তরুণদের সম্মিলিত নেতৃত্বের ফলেই দেশে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের পতন ত্বরান্বিত হয়েছে। আমাদের এই ত্যাগ ও অটল ভূমিকার কারণেই আমরা বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচনে দেশের জনগণ প্রচলিত রাজনীতির বাইরে নতুন শক্তি হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের ট্রাক মার্কাকে তাদের আস্থার প্রতীক হিসেবে বেছে নেবে।’

এমএএএন/এফএ/এমএমএআর/এএসএম