দেশজুড়ে

দেড় মাসে রংপুরে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে মসুর ডালের দাম

রংপুরের বাজারে বেড়েছে মসুর ডালের দাম। দেড় মাসের ব্যবধানে ভালো মানের চিকন দানার ডালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০ টাকা। তবে মাঝারি ও বড় দানার দাম তেমন বাড়েনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চিকন দানার মসুর ডালের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মসুর ডালের বড় অংশই আমদানি করা হয়। অন্যদিকে বাজারে সবজি, মাছ ও মাংসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডালের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে দামও বাড়তি।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে চিকন দানার এক কেজি মসুর ডাল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা। মাঝারি দানা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা। আর বড় দানা বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকা। দেড় মাস আগেও চিকন দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছিল ১৩০-১৪০ টাকা।

শহরের হাড়িপট্টি রোডের খুচরা ডাল বিক্রেতা এনামুল হক জানান, পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কেনেন তার থেকে ১০-১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি করেন।

মুলাটোল আমতলা বাজারের মুদি দোকানি আব্দুল মজিদ ভুট্টু বলেন, প্রতিবছরেই ডালের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে চিকন দানার ডালের দাম গত পাঁচ বছরে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডাল আমদানি নির্ভর একটি পণ্য। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পেলে দেশের বাজারেও দাম বেড়ে যায়।

নবাবগঞ্জ বাজারের পাইকারি ডাল বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম জানান, চিকন দানার মসুর ডাল ১৪৫-১৪৬ টাকা, মাঝারি সাইজের ৯০ টাকা ও বড় সাইজেরটা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে চিকন দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছিল ১৩০-১৪০ টাকা, মোটা দানা ছিল ১০৮-১১০ টাকা। এক বছর আগে ২০২৩ সালের একই সময় চিকন দানার দাম ছিল ১২৫-১৩০ টাকা, আর বড় দানা বিক্রি হয়েছিল ৯৫-১০০ টাকা। তবে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে মাঝারি দানার মসুর ডালের কেজি ১১০-১১৫ থেকে বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা হয়। আর ভালো মানের, অর্থাৎ চিকন দানার মসুর ডালের কেজি বিক্রি হয় ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।

আরও পড়ুন:রংপুরে দুদিনে অর্ধেকে নেমেছে কাঁচামরিচের দামরাজশাহীর বাজারে সরবরাহ কমায় চড়া দাম সবজির

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, ডালজাতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় মসুর ডাল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এই ডাল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টন। অথচ এর আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টন। সে হিসাবে পাঁচ মাসে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ। এ কারণে দীর্ঘ সময় মসুর ডালের দামে কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।

সিটি বাজারের মুদি দোকানদার মতিয়ার রহমান বলেন, বাজারে সবজি ও মাছ-মাংসের দাম চড়া। অনেকে খাবার মেন্যুতে প্রতিনিয়ত ডাল রাখতে পছন্দ করেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে দাম বৃদ্ধি পায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বছরে মসুর ডালের চাহিদা ছয় লাখ টনের বেশি। এর মধ্যে দুই লাখ ২০ হাজার টন দেশেই উৎপাদিত হয়। বাকি চার লাখ টন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নেপাল ও ভারতসসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।

নগরীর ধাপ বাজার এলাকার বাসিন্দা এজাজ আহমেদ বলেন, তার পরিবারের পাঁচজন সদস্য। পছন্দের খাবার হিসেবে প্রতিদিন একবেলা করে হলেও ডাল প্রয়োজন হয়। চিকন দানার মসুর ডালের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে সামনের দিনে খাবার পাতে উঠবে কিনা সন্দেহ। সরকারিভাবে এসব পণ্যের ওপর নজরদারি বাড়ানোর দাবিও জানান তিনি।

রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, ২০২৩ সালে প্রতি কেজি মসুর ডালের কেজি মানভেদে ১০৫ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হতো। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি (ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু সময়) ছিল ৯৫ থেকে ১২০ টাকা। এর আগের বছর ২০২১ সালে একই সময়ে (করোনার সময়) ছিল ৬৫ থেকে ১১০ টাকা।

২০২০ সালেও মান ভেদে মসুর ডাল বিক্রি হয়েছিল ৫৫ থেকে ১০০ টাকা।

জিতু কবীর/এমএন/এএসএম