দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন শিক্ষার্থী। এবারের চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অন্যদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দুর্গাপূজার ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে প্রার্থীরা প্রচার শুরু করেছেন পুরোদমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ঝুপড়ি, অনুষদের শ্রেণিকক্ষ, গুরুত্বপূর্ণ মোড়, আবাসিক হল, বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশন, শাটল ট্রেন, চায়ের আড্ডায় চলছে নির্বাচনী আমেজ।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রার্থিতা করছেন সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ও ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ) সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন। ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে আইন বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান প্রার্থী হয়েছেন।
এ ছাড়া চাকসুতে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মিজান মিয়া, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আকাশ দাস ও স্বতন্ত্র হয়ে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সুরত আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যদিকে এএফ রহমান হল সংসদে যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক পদে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শান্ত হোসেন এবং নির্বাহী সদস্য পদে মো. নাদিম হোসেন প্রার্থী হয়েছেন। ছাত্রীদের আবাসিক বিজয় ২৪ হল সংসদে ছাত্রী সংস্থা সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আয়েশা খাতুন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাহী সদস্য পদে প্রার্থী মিজান মিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্রেইল তাদের মৌলিক অধিকার কিন্তু তারা তা পাচ্ছেন না। আমি নির্বাচিত হলে এই অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করব।’
ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের প্রার্থী আকাশ দাশ বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমগুলো শিক্ষার্থীবান্ধব। ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করছে। তারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইলের ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দিয়েছে। আমি নিজেও নির্বাচিত হলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করব।’
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে বর্তমানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৮৬ জন। তবে এ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যালট পেপার ছাপানো হবে কি না, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।
এদিকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল প্রচারপত্র (লিফলেট) তৈরি করেছেন হল সংসদের প্রার্থী শেখ সাদিয়া সিদ্দিকা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই পদে তিনি ছাড়াও রয়েছেন আরও দুই প্রার্থী।
১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে। এ নির্বাচনে প্রার্থী রয়েছেন ৯০৭ জন। এর মধ্যে চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ৪৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন। এর আগে ১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১ সালে এবং ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ চাকসুর নির্বাচন হয়।
সোহেল রানা/এমএন/এমএস