দেশজুড়ে

আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি, চেষ্টায় জামায়াতও

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল উপজেলা) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে উঠান বৈঠক ও কর্মিসভার মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আর কোনো দলের প্রচারণা এখনো দেখা যায়নি।

এই আসনে বিগত ১২টি জাতীয় সংসদ ও একটি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৫ বার, বিএনপি ৫ বার, জাতীয় পার্টি ১ বার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ২ বার বিজয়ী হয়েছে। দীর্ঘদিন এ আসনটিতে রাজত্ব করেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পাল্টে গেছে চিত্র। আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। তবে জামায়াতে ইসলামীও জোর চেষ্টা চালাচ্ছে আসনটি নিজেদের ঝুলিতে নিতে।

১৯৭৩ সালে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন শামসুর রহমান খান শাহজাহান। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। এরপর ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী শওকত আলী ভূঁইয়া। ১৯৮৬ সালে আবারো নির্বাচিত হন শামসুর রহমান খান শাহজাহান। এরপর ১৯৮৮ সালে এ আসনের এমপি হন জাতীয় পার্টির সাইদুর রহমান খান মোহন।

 আরও পড়ুন- আব্দুর রাজ্জাকের আসন পেতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াতবিএনপিতে আছে পিন্টু, চমক দেখাতে চায় জামায়াত-গণঅধিকার

১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির লুৎফর রহমান খান আজাদ এই আসনে রাজত্ব করেন। দুই সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তন করে রাজনীতিতে নতুন মুখ ডা. মতিউর রহমানকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগকে আসনটি উপহার দেন মতিউর রহমান।

কিন্তু ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু। তখন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন প্রয়াত শামসুর রহমান খান শাহজাহানের ভাতিজা আমানুর রহমান খান রানা। এই নির্বাচনে রানা বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিটে রানা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। কিন্তু টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় অভিযুক্ত রানাকে কারাগারে যেতে হয়। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে রানার বাবা আতাউর রহমান খানকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিলে তিনি বিজয়ী হন। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমানুর রহমান খান রানা জেল থেকে জামিনে বের হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন রানা।

১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঘাটাইল উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৪ হাজার ১৫৬ জন। নিবন্ধিত নতুন ভোটার ১৯ হাজার ৪৪৭ জন।

আরও পড়ুন-আ’লীগের ঘাঁটিতে বিএনপির কোন্দল, সুবিধা পেতে পারে জামায়াতপ্রবাসে বিএনপির ওসমান ফারুক, মাঠে সরব জামায়াতের জেহাদ খান

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান খান আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাসির ও মাইনুল ইসলাম প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি হোসনী মোবারক বাবুল। চমক দেখাতে তিনি বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আরও পড়ুন- বিএনপির ঘাঁটিতে জয়ের স্বপ্ন জামায়াতেরজামায়াতসহ ৫ দলে একজন করে প্রার্থী, বিএনপিতে ছড়াছড়ি

নির্বাচনের বিষয়ে লুৎফর রহমান খান আজাদ কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

তবে তার অনুসারী ঘাটাইল পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন ধলা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজাদ ভাই দীর্ঘদিন করে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি অনেক সংগ্রাম করেছেন। এবারও তিনি প্রার্থী হবেন। আশা করছি দল তাকে মনোনয়ন দেবে।’

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাসির জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে ঘাটাইলে দলের দায়িত্বে রয়েছি। বিগত সময়ে আমার নামে একাধিক মামলা, নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি আমাকে কারাগারেও যেতে হয়েছে। ফ্যাসিস্টের বিদায়ের পর আমরা এখন মাঠে রয়েছি। এখন নির্বাচনী কাজ ও ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছি। আশা করছি আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। তবে যিনি মনোনয়ন পাবেন আমরা সবাই তার পক্ষে কাজ করবো।’

বিএনপির আরেক প্রার্থী মাইনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। আমি ছাড়াও বিএনপির আরও দুই প্রার্থী রয়েছেন। তবে আমি আশাবাদী, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। ঘাটাইলের প্রধান সমস্যা হচ্ছে মাদক। আমি নির্বাচিত হলে মাদকমুক্ত করবো।’

জামায়াতের প্রার্থী হোসনী মোবারক বাবুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘাটাইলে জনগণের প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি। ঘাটাইলের অনেক রাস্তা বেহাল। আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে ঘাটাইলকে প্রত্যাশা অনুযায়ী গড়ে তুলবো। সেখানে যা প্রয়োজন তা গড়ে তুলবো।’

এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রেজাউল করিমকে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করলেও তাকে মাঠে পাওয়া যায়নি।

ইসলামী আন্দোলনের ঘাটাইল উপজেলার সভাপতি সোলায়মান ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের তেমন কোনো পোস্টার না থাকলেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। আমরা মানুষের কাছে গিয়ে আমাদের প্রার্থীর কথা তুলে ধরছি।’

এছাড়া গণসংহতি আন্দোলন এখনো টাঙ্গাইলে কোনো প্রার্থী দেয়নি। দলটির টাঙ্গাইল জেলা সংগঠক ফাতেমা রহমান বিথি জাগো নিউজকে বলেন, ‘টাঙ্গাইলে আমরা নির্বাচনে আসবো কি না এখনো চিন্তা করিনি। তবে আমাদের কাছে দলীয় মনোনয়নের জন্য অনেকেই আবেদন করেছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।’

অপরদিকে এনসিপির হয়ে উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার প্রার্থী হবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে এখনো তার কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি।

এমএএএন/এফএ/এমএমএআর/এমএস