আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিরতির খবরে গাজায় আনন্দ-শঙ্কার মিশ্র প্রতিক্রিয়া

দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময়ের ধ্বংসযজ্ঞ, বাস্তুচ্যুতি ও হতাশার পর যুদ্ধবিরতির খবরে গাজাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উচ্ছ্বাস। তবে সেই উচ্ছ্বাসের মাঝেই বিরাজ করছে গভীর সতর্কতা ও অনিশ্চয়তা।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেল থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় মানুষজনের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে ওঠে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার খবর শুনে। কেউ কেউ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন, কেউ আবার চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, হয়তো এখন অন্তত একটুখানি শান্তি মিলবে। কিন্তু অনেকের শঙ্কা- এই যুদ্ধবিরতি বাস্তবে কতটা টিকবে, তা সময়ই বলে দেবে।

এদিকে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুনর্মিলনের অপেক্ষায় আছে হাজারো মানুষ। কেউ কেউ প্রিয়জন হারানোর শোকে শোকপালনের সুযোগও পাননি। গাজার দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের বহু এলাকা এখনো ‘রেড জোন’ বা সক্রিয় বিপদপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। তাই বাড়ি ফেরার আগে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

অবস্থার ভয়াবহতায় গাজার মানুষ এখনো পানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। পানির ট্যাংকারের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে কয়েক গ্যালন পানি সংগ্রহ করছেন তারা। যতদিন না বাস্তব পরিবর্তন আসে, ততদিন বেঁচে থাকার জন্য এই সংগ্রামই তাদের একমাত্র ভরসা।

মানবিক সহায়তার তীব্র অভাবও দেখা দিয়েছে। খাদ্য, পানি, ওষুধ ও শীত আসার আগে জরুরি আশ্রয়সামগ্রী- সবকিছুরই মারাত্মক সংকট চলছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, হাজার হাজার অস্থায়ী তাঁবু ও মোবাইল হাউজের জরুরি প্রবেশাধিকার এখন গাজাবাসীর প্রাণের দাবি।

চিকিৎসা খাতও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালগুলো কার্যত অকেজো, চিকিৎসকরা কাজ করছেন অমানবিক পরিবেশে। অবকাঠামো পুনর্গঠন, ধ্বংসস্তূপ সরাতে বুলডোজার, সড়ক পুনরায় চালু করা ও নাগরিক জীবনের পুনর্বাসন- সবকিছুই এখন সময়ের দাবি।

গাজার সাধারণ মানুষ বলছেন, যত ক্ষতি-ক্ষয়ক্ষতিই হোক না কেন, তারা আবার ফিরে আসবেন নিজেদের ভূমিতে। এক তরুণ বলেন, আমরা পুনর্গঠন করবো, আমাদের ঘর, রাস্তা, হাসপাতাল- সব কিছুই নতুন করে গড়ে তুলবো।

একজন প্রবীণ গাজাবাসীর কণ্ঠে শোনা গেল আশার সুর। তিনি বলেন, ইসরায়েল আমাদের ধ্বংস করতে চেয়েছে, কিন্তু আমরা টিকে আছি। যুদ্ধবিরতি যদি সত্যিই কার্যকর হয়, তবে আমরা আবার নতুন গাজা গড়ে তুলবো।

সূত্র: আল-জাজিরা

এসএএইচ