অনেক আগে আমাদের অরল্যান্ড ফিল্ম ক্লাবে লাস্লো ক্রাসনাহরকাইয়ের “Satantango” ছবিটি দেখেছিলাম। তখন তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলাপ হয়েছিল। সে সময় সে বইটি নিয়ে আগ্রহ হয়েছিল। তা সংগ্রহ করে পড়েছিলাম। বোদ্ধা লেখক।তবে সহজপাঠ্য নয়।সেটা হয়তো আমার সীমাবদ্ধতা।
তিনি বুকার পুরস্কারসহ আমেরিকার সেরা সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। এবার পেয়েছেন নোবেল। সাহিত্য জগতে লাস্লো ক্রাসনাহরকাই এমন এক নাম, যিনি তাঁর স্বকীয় ভঙ্গি আর অদ্ভুত দীর্ঘ বাক্যে সাজানো বর্ণনায় পাঠককে টেনে নিয়ে যান এক অস্থির, দুঃখময় জগতে। তাঁর সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাস “Satantango” প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে, আর তা-ই তাঁকে বিশ্বসাহিত্যে এক ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
তার স্বকিয়তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। Satantango এর সাথে আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার অনেকটা মিল আছে।
এই উপন্যাসের পটভূমি এক নির্জন হাঙ্গেরীয় গ্রাম। সমাজতান্ত্রিক শাসন ভেঙে পড়েছে, গ্রামজীবন যেন কাদা, বৃষ্টি আর হতাশার দোলাচলে আটকে আছে। সাধারণ মানুষের চোখে জীবনে আর কোনো আলো নেই। ঠিক তখন ফিরে আসে দু’জন পুরোনো চরিত্র—ইরিমিয়াস আর পেত্রি। গ্রামবাসীরা ভাবে, তারা বুঝি মুক্তিদাতা, সব দুর্দশা মিটিয়ে দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোঝা যায়, এরা কেবল নতুন প্রতারণা নিয়ে এসেছে।
ক্রাসনাহরকাই গল্পকে এগিয়ে নেন এক অদ্ভুত ছন্দে—যেন এক ধীর কিন্তু ভয়াবহ ট্যাঙ্গো নাচ। প্রতিটি চরিত্র নেমে আসে সেই নাচের মঞ্চে—আশা, ভরসা, বিশ্বাস, আবার হতাশা আর প্রতারণায় ডুবে যেতে থাকে। পাঠকের মনে জমতে থাকে অস্বস্তি, চাপ, আর প্রশ্ন—আসলে কি কোনো মুক্তি আছে, নাকি সবই পুনরাবৃত্তি?
“Satantango” শুধু একটি গ্রামের গল্প নয়, এটি ভেঙে পড়া সমাজের রূপক। যখন কোনো ব্যবস্থার ভরসা থাকে না, তখন মানুষ ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভেসে যায়। এই উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছেন, মানবজীবনের হতাশা কেমন করে এক অন্তহীন চক্রে ঘুরতে থাকে।
ক্রাসনাহরকাইয়ের সাহিত্য হয়তো সহজপাঠ্য নয়, কিন্তু তা গভীর, তীক্ষ্ণ আর ভেতর থেকে নাড়া দেয়। “Satantango” পাঠককে মনে করিয়ে দেয়—জীবন সব সময় মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেয় না, বরং কখনো কখনো কেবল এক দীর্ঘ, ক্লান্তিকর নাচ।
তার অন্যান্য উপন্যাস পড়বার ইচ্ছে আছে।
লেখক: আমেরিকার অরলান্ডো প্রবাসী চিকিৎসক।
এইচআর/এএসএম