শিক্ষা

পরীক্ষায় খারাপ ফল করায় আত্মহননের প্রবণতা বাড়ছে, করণীয় কী

এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় খারাপ ফল করায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অনেক শিক্ষার্থী। বাবা-মা ও নিজের প্রত্যাশা মতো ফল না পাওয়ায় প্রতিবার পরীক্ষার ফল ঘোষণার পরই সারাদেশে আত্মহত্যার এ প্রবণতা দেখা যায়। যা ক্রমেই বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খারাপ ফল করলে বা কোনো বিপর্যয়ের মুখে পড়লে সবাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় না। যারা এ পথে পা বাড়ায়, তারা রিস্ক গ্রুপ। অর্থাৎ আগে থেকেই তাদের এ ধরনের প্রবণতা ছিল। তারা বেশি আবেগপ্রবণ এবং মানসিক অস্থিরতায় ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

‘বিপর্যয়-জরুরি অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য উঠে আসে। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ। রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় অবস্থিত জাগো নিউজ কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এর আয়োজন করা হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু ও কিশোর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাদিয়া আফরিন বলেন, পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা যে প্রতিক্রিয়া দেখায় বা ভেঙে পড়ে, তা ঠিক রাখতে প্রাথমিক কাজ হলো—পূর্বপ্রস্তুতি। আগে থেকেই স্কুল বা কলেজে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পরিচর্যা করতে হবে। তাহলে ফল প্রকাশের পর এ ধরনের আত্মহননের পথে তারা হাঁটবে না।

তিনি বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের ইমোশনাল ডেভেলপমেন্ট হয়, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টও হয়। স্কুলের মেন্টাল কাউন্সিলর এবং শিক্ষকদের প্রোপার সাইকোলজিক্যাল বা বিহেভিয়ারাল সায়েন্সের ওপরে যদি ট্রেনিং দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর আবেগীয় বা আচরণগত যখন সমস্যা হবে, সে প্রথম তার কাছে হেল্প নিতে পারবে। একজন ট্রাস্টেড এডাল্ট পারসনের (বিশ্বস্ত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ) কাছে সে তার আবেগ নিয়ে কথা বলতে পারবে।

ডা. সাদিয়া আফরিন আরও বলেন, আমার বন্ধু বা বান্ধবী পাস করে গেছে, কিন্তু আমি পারলাম না। হয়তো তার নিজের ওপরে একটা দায়বদ্ধতা মনে হবে। ভাববে কীভাবে সে সমাজে মুখ দেখাবে? ফলে প্রথম থেকেই যদি তাদের ইমোশনালি স্ট্রাগল করে বা সেলফ স্টিম বা আত্মবিশ্বাসের জায়গাগুলোতে আমরা কাজ করতে পারি, তাহলে কিন্তু এ ধরনের ঘটনা অনেক কম হবে।

যারা এ ধরনের পরিস্থিতিতে আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের আগেও এমন হিস্ট্রি থাকে জানিয়ে এ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, দেখুন- এ ধরনের বিপর্যয়ের মুখে সবাই কিন্তু আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় না। তাহলে আমাকে একটা রিস্ক গ্রুপ আইডেন্টিফাই করতে হবে যে, আসলে কারা খুব ইমোশনালি ভালনারেবল অথবা সামাজিক কোনো চাপ বা মানসিক চাপে পড়লে খুব ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নেয়। অথবা আগের এরকম কোনো হিস্ট্রি ছিল।

‘সেভাবে যদি আমরা একটা রিস্ক গ্রুপকে আইডেন্টিফাই করে ফেলতে পারি, তাদের প্রোপার চিকিৎসা বা মেন্টাল হেলথ কাউন্সিলরের কাছে পাঠাতে পারি বা রেফার করতে পারি, তাহলে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।’

ডা. সাদিয়া বলেন, শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষক যেমন জড়িত, ঠিক তেমনই পরিবার এবং আশপাশের পরিচিতজনেরাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং পরিবার ও পরিচিতজনদের সঙ্গে যদি তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে এবং ইনডিভিজুয়ালি সে যদি ইমোশনালি ভালনারেবল বা আবেগীয় পর্যায় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় না থাকে, তাহলে কিন্তু এ ধরনের খুব স্ট্রেস রিলেটেড সমস্যা অথবা পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ের কারণে একটি ধ্বংসাত্মক চিন্তা থেকে সে দূরে সরে আসবে।

এএএইচ/এমকেআর/জিকেএস