দেশজুড়ে

বিএনপিতে বিভক্তি, জামায়াতসহ অন্য দলে একক প্রার্থী

টাঙ্গাইল জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন টাঙ্গাইল-৫ (সদর)। এই আসনটিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। তবে এবার একাধিক প্রার্থী থাকায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এছাড়া মাঠে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের একক প্রার্থীরা।

টাঙ্গাইল সদর আসনে মনোনয়ন পেতে বিএনপির একাধিক প্রার্থী জনসংযোগ করছেন। এতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একদিকে টাঙ্গাইলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নির্বাচনী বার্তা ও প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। অপরদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের বিভিন্ন পোস্টার চোখে পড়ছে।

জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে দলের জেলা আমির আহসান হাবীব মাসুদ নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন।

এছাড়া এনসিপি থেকে প্রার্থী হবেন দলের কেন্দ্রীয় সংগঠক আজাদ খান ভাসানী। তিনি মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি।

এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীও একজন। তিনি দলের জেলা শাখার সভাপতি আকরাম আলী। এছাড়া খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন দলের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মো. ছানোয়ার হোসেন সরকার। তবে তাদের তেমন কোনো প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না।

টাঙ্গাইল-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ৪ বার, বিএনপি ৪ বার, জাতীয় পার্টি ৩ বার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) একবার জয়লাভ করেন।

আরও পড়ুন- আব্দুর রাজ্জাকের আসন পেতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াতবিএনপিতে আছে পিন্টু, চমক দেখাতে চায় জামায়াত-গণঅধিকার

১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির আবদুর রহমান জয়লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মীর মাজেদুর রহমান এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান বিজয়ী হন। ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান জয়লাভ করেন। পরে তিনি জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন।

এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান জয়ী হন। একই সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে নির্বাচিত হন বিএনপির মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) আবুল কাশেম জয়লাভ করেন। কিন্তু ভোট কারচুপির অভিযোগে মাহমুদুল হাসান মামলা করেন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে জাতীয় পার্টির আবুল কাশেমের এমপি পদ রহিত করে ২০১২ সালের ৩০ মে বিএনপির মাহমুদুল হাসানকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন এমপি নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি তাদের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ছানোয়ার হোসেন এমপি নির্বাচিত হন।

এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪৬ জন। নিবন্ধিত নতুন ভোটার ২১ হাজার ৯৯৩ জন।

ভোটাররা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন ও জুলুম করা হয়েছে। যে দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না তাদের ভোট দেবেন ভোটাররা।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত সময়ে সাধারণ মানুষ অনেক অবহেলিত ছিল। আমি সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। আন্দোলন-সংগ্রামে আমার ভূমিকা ছিল। আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এ আসনের ছেলে। আমি প্রায় তিন যুগ ধরে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। আন্দোলন-সংগ্রামে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছি। কারা-নির্যাতন ভোগ রয়েছি। আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

আরও পড়ুন- কারাগারে লতিফ সিদ্দিকী, ভোটের মাঠে বিএনপি-জামায়াতআসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি, চেষ্টায় জামায়াতও

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘টাঙ্গাইলের সব আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান রয়েছে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীরা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিভিন্ন আসনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। দল অবশ্যই যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবে।’

জেলা জামায়াতের আমির আহসান হাবীব মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত সময়ে জেলা শহরের কোনো উন্নয়ন হয়নি। কেউই সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করায় জনগণের অধিকার বাস্তবায়িত হয়নি। যে কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। পরিকল্পিতভাবে কেউই কোনো কিছু করেনি। আমরা সততার সঙ্গে কাজ করতে চাই। পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন করার দাবি করছি যাতে ভোটকেন্দ্র কেউ দখল করতে না পারে। নতুন ব্যবস্থাপনা আমাদের দরকার। আমরা চাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক যাতে কোনো দলীয় সরকারের প্রভাবে দুর্নীতিবাজরা নির্বাচিত হয়ে না আসতে পারে।’

খেলাফত মজলিসের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সদরের প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কারণে প্রচারণা চালানো হচ্ছে না। তবে অন্যান্য আসনে প্রচারণা পালানো হচ্ছে।’

এমএএএন/এফএ/এমএমএআর/এমএস