আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমির খান মুত্তাকি শনিবার (১১ অক্টোবর) ভারতের ঐতিহাসিক দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা সফর করেছেন। সেখানে তাকে হাদিস শিক্ষাদানের সার্টিফিকেট (সনদ) দেওয়া হয়েছে। ফলে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তিনিই প্রথম শীর্ষ নেতা যিনি দেওবন্দ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ পেলেন।
ছয় দিনের ভারত সফরের অংশ হিসেবে এই সফর তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে ধর্মীয়, শিক্ষামূলক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।
শনিবার সকালে দিল্লি থেকে সড়কপথে দেওবন্দ পৌঁছালে মুত্তাকিকে দারুল উলুমের মহাপরিচালক মুফতি আবুল কাসেম নোমানী ও ১৫ জন জ্যেষ্ঠ আলেমের একটি প্রতিনিধি দল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান। ছাত্র ও শিক্ষকরা তাকে ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মাওলানা নোমানীর তত্ত্বাবধানে হাদিস পাঠের একটি ঐতিহ্যবাহী সেশনে অংশ নেন মুত্তাকি। এরপর তাকে হাদিস শিক্ষাদানের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কাসেমী’ উপাধি লাভ করেন। এখন থেকে তার নাম হবে মাওলানা আমির খান মুত্তাকি কাসেমী।
এই সনদ শুধু তার জ্ঞানগত মর্যাদাই তুলে ধরে না, বরং তাকে দেওবন্দি ধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যে ধারা আফগান ধর্মীয় চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব আছে।
ব্যতিক্রমী এক পদক্ষেপে দারুল উলুম দেওবন্দ শনিবার সব ক্লাস বন্ধ রেখে মুত্তাকির সফরের জন্য সময় বরাদ্দ করে—যা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল ঘটনা বলে জানিয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদনী এ সফরকে ‘এক ধরনের ঘরে ফেরা’ হিসেবে অভিহিত করেন। বলেন, মুত্তাকি যেন নিজের সাবেক শিক্ষালয়ে ফিরে এলেন।
সভায় মুত্তাকি বলেন, এই হৃদয়গ্রাহী অভ্যর্থনার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি আশা করি ভারত ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে। আমরা নতুন কূটনীতিক পাঠাবো, আর আপনাদেরও কাবুলে স্বাগত জানাবো। দিল্লিতে যেভাবে আমাকে বরণ করা হয়েছে, তাতে আমি মনে করি এমন সফর ভবিষ্যতে আরও হতে পারে।
দেওবন্দি মতবাদের মূল কেন্দ্র হিসেবে ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ তালেবানের আদর্শিক শিকড়ে গভীরভাবে যুক্ত। যদিও বহু তালেবান নেতা পাকিস্তানের হাক্কানিয়া মাদরাসা থেকে শিক্ষালাভ করেছেন, সেটিও দেওবন্দের আদলে গঠিত।
সফরটি কড়া নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত হয়, যাতে কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা সমন্বয় করে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি তালেবান সরকারের জন্য একদিকে ধর্মীয় বৈধতা অর্জনের প্রচেষ্টা, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক কূটনৈতিক সম্ভাবনার অন্বেষণ। যদিও ভারত এখনও তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, তবে মানবিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
সমাপনী অংশে দারুল উলুম দেওবন্দের মহাপরিচালক মুফতি নোমানী মুত্তাকিকে একটি কালো পাগড়ি পরিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
এমএসএম