নওগাঁর পোরশায় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তিনটি ভারতীয় মহিষসহ একটি স্টিয়ারিংবিহীন গাড়ি জব্দ করার পরেও চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৫ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার নীতপুর বিওপির সীমান্ত পিলার ২২৯ থেকে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মনোহরপুর এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় এগুলো উদ্ধার করা হয়। তবে এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় কোনো মামলা করেননি বিজিবি নওগাঁ-১৬ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
চোরাকারবারিদের সুবিধা পাইয়ে দিতেই বিজিবি আইনবহির্ভূতভাবে কাজটি করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জব্দ তিনটি মহিষ ও গাড়ির বাজারমূল্য প্রায় ১১ লাখ টাকা।
তবে বিজিবির দাবি, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ভোরে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা করা হয়। অভিযানে মালিকবিহীন অবস্থায় মহিষ ও গাড়ি উদ্ধারের পর নিয়ম মেনে এসব কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরের জেলা নওগাঁর পোরশা উপজেলা সদর ঘেঁষা ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা নীতপুর। ভারতীয় গরু ও মহিষ চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত নীতপুর সীমান্ত। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এই সীমান্ত হয়ে দেশে আসে ভারতীয় স্মার্টফোন। সীমান্তবর্তী এই এলাকায় চোরাচালান ও অপরাধ দমনে বিজিবির নওগাঁ-১৬ ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি কাজ করার কথা স্থানীয় থানা পুলিশেরও। তবে এ দুটি সংস্থার তদারকিতেও সীমান্ত চোরাচালানমুক্ত হয়নি। উল্টো স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় চোরাচালানে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে বিজিবির বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার ভোরে উপজেলার নীতপুর বিওপির সীমান্ত পিলার ২২৯ থেকে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মনোহরপুর এলাকায় তিনটি ভারতীয় মহিষসহ একটি স্টিয়ারিংবিহীন গাড়ি পড়ে থাকতে দেখের স্থানীয়রা। পরে তারা খবর দেন বিজিবিকে। এরপর বিজিবি সেখানে উপস্থিত হলে এ কাজে জড়িত চিহ্নিত চোরাকারবারি ইমান আলীর নাম উঠে আসে স্থানীয়দের মুখে। উদ্ধার হওয়া গাড়িটিও বাংলাদেশের বলে শনাক্ত করা হয়। তবে রহস্যজনক কারণে সবকিছু জেনেও বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় কোনো মামলা করেননি বিজিবি নওগাঁ-১৬ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। নীতপুর বিওপি কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মাহফুজুর রহমান দায়সারাভাবে জব্দ করা মহিষ ও গাড়ি কাস্টমসে জমা দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আইন অনুযায়ী শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে আসা কোনো জিনিস জব্দ করা হলে বিজিবি সেটি কাস্টমসে জমা দেওয়ার এখতিয়ার রাখে। চোরাচালানের মাধ্যমে আসা ভারতীয় মহিষ ও দেশীয় ওই গাড়িটি কাস্টমসে জমা দেওয়ার সুযোগ নেই। অথচ শুধুমাত্র চোরাকারবারিরা যাতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন, সেই সুবিধা পাইয়ে দিতে বিজিবি এসব কাস্টমসে জমা দিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করেনি। দৈনিক রাত ১০টার পর থেকে চোরাকারবারিরা প্রকাশ্যে নীতপুর সীমান্ত হয়ে গরু ও মহিষ চোরাচালান করেন।’
এ বিষয়ে নীতপুর বিওপি কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘স্টিয়ারিংবিহীন গাড়িটি বাংলাদেশের হলেও সেটির বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। গাড়িটি অবৈধ হওয়ায় সেখানে আসা মালামাল অর্থাৎ মহিষগুলোও অবৈধ। সেই দিক বিবেচনায় অবৈধ মালামাল হিসেবে তিনটি মহিষসহ গাড়িটি নজিপুর কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।’
চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা না করা কতটুকু আইনসম্মত ছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি নওগাঁ-১৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম মাসুম বলেন, তিনটি ভারতীয় মহিষসহ স্টিয়ারিংবিহীন গাড়িটি জব্দ করার পরের দিন সোমবার (৬ অক্টোবর) চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে পোরশা থানায় মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে ওই থানায় খোঁজ নিতে প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন তিনি।
পরে পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিজিবি থেকে কিছুই জানানো হয়নি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে মালিকবিহীন মহিষ ও গাড়ি উদ্ধারের খবর পেয়েছিলাম। এরপর বিজিবি সেটি কী করেছে জানা নেই।
এর কিছুক্ষণ পর ওসির বরাত দিয়ে মামলা না হওয়ার বিষয়টি পুনরায় জানালে বিজিবি নওগাঁ-১৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসামি ছাড়া কিছু উদ্ধার হলে সেটি কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়। এটাই নিয়ম। এটি পুলিশ জানে। এ বিষয়ে কাস্টমসে মামলা হয়েছে।’
আরমান হোসেন রুমন/এসআর/জেআইএম