ইসলামী বইমেলায় ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ সেন্টার’ প্রকাশিত ‘ইসলামী ব্যাংকিং-এ ক্যাশ ওয়াক্ফ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এর পূর্বগেটে আয়োজিত এ বইমেলায় রোববার (১০ অক্টোবর) এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলমের সভাপতিত্বে ও সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির এডিশনাল এমডি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন মজুমদার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টারের জেনারেল সেক্রেটারি ব্যারিস্টার মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ ইবনে হোছাইন এবং গ্রন্থকার ড. মোহা. মেসবাহ উদ্দীন।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলম বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকিং-এ ক্যাশ ওয়াক্ফ’ শীর্ষক গ্রন্থে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মৌলিক ধারণা, এর বৈশিষ্ট্য এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর বিকাশ যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে পাঠকদের দারুণভাবে সমৃদ্ধ করবে। বিশেষ করে ক্যাশ ওয়াক্ফের মতো একটি মানবিক, কল্যাণমুখী আর্থিক ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা এই গ্রন্থকে একটি ব্যতিক্রমী উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই বইটি শুধুমাত্র ব্যাংকার বা গবেষকদের জন্য নয়, শিক্ষা, সমাজ ও মানবসেবার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী সকলের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন মজুমদার বলেন, “ক্যাশ ওয়াক্ফ একটি অনন্য ইসলামী দাতব্য ব্যবস্থা, যা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। এই বইয়ে একদিকে যেমন ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শনের ভিত্তি তুলে ধরা হয়েছে, অন্যদিকে বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্যাশ ওয়াক্ফের ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করা হয়েছে। লেখককে এজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
মেলা প্রাঙ্গণে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান-ছবি সংগৃহীত
বিশেষ অতিথি ব্যারিস্টার মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ক্যাশ ওয়াক্ফের মতো ইসলামী অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর আইনগত কাঠামো ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যে প্রাঞ্জল ও গভীর বিশ্লেষণ এই বইয়ে রয়েছে, তা গবেষকদের পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের জন্যও দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।
তিনি লেখকের গবেষণাভিত্তিক কাজের প্রশংসা করে বলেন, ক্যাশ ওয়াক্ফ নিয়ে এমন গভীর আলোচনা বর্তমান সময়ের আইনের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সময়োপযোগী।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউসুফ ইবনে হোছাইন তার বক্তব্যে বলেন, এই বই শুধু একটি গবেষণামূলক প্রকাশনা নয়, এটি ইসলামী শিক্ষার বিকাশ এবং ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পুনরুত্থানে একটি কার্যকর পদক্ষেপ। মানবসেবা ও শিক্ষাক্ষেত্রে ক্যাশ ওয়াক্ফের ভূমিকা এবং সমাজে এর উপযোগিতা নিয়ে লেখকের যে ব্যাখ্যা, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী।
লেখক ড. মোহাঃ মেসবাহ উদ্দীন বলেন, ইসলামী ব্যাংকিং ও ওয়াক্ফ— এই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী আর্থিক ধারণাকে একটি অভিন্ন কাঠামোর মধ্যে একত্রিত করার প্রয়াস থেকেই বইটি রচিত হয়েছে। গ্রন্থটি ইসলামী ব্যাংকিং ও ক্যাশ ওয়াক্ফ বিষয়ক গবেষণাভিত্তিক রচনা হওয়ায় এখানে পাঠকগণ ইসলামি অর্থনীতির মৌলিক দর্শন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার অগ্রগতি, ক্যাশ ওয়াক্ফের ধারণা, প্রকারভেদ, ইতিহাস ও সমাজে এর কার্যকর ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। গ্রন্থটি সমাজে ক্যাশ ওয়াক্ফ নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার দ্বার উন্মোচন করবে বলে লেখক আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ইভিপি জিল্লুর রহমান পাটোয়ারী, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন রব্বানী।
অনুষ্ঠানে হজ্জ ফাইনান্স লিমিটেড-এর এমডি শফীকুর রহমান, আইবিটিআর এর সাবেক ডিজি মাহফুজুর রহমানসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, আলেম, ব্যাংকার, সাংবাদিক, সাহিত্যপ্রেমী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক উৎসাহী পাঠক উপস্থিত ছিলেন।
এসএইচএস/জেআইএম