মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও গাজা যুদ্ধের অবসানকে কেন্দ্র করে মিশরের পর্যটন নগরী শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত ‘শারম আল-শেখ শান্তি সম্মেলন’।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই ঐতিহাসিক সম্মেলনের সহ-সভাপতিত্ব করেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ সম্মেলনে যোগ দেন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রভাবশালী নেতা ও সরকার প্রধানরা। অংশ নেন জর্ডান, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, আজারবাইজান, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, গ্রিস, আর্মেনিয়া, পাকিস্তান, কানাডা, নরওয়ে, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান, জাপান, নেদারল্যান্ডস, ভারত ও প্যারাগুয়ের প্রতিনিধিরা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব, আরব লীগের মহাসচিব, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি, আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থার (ফিফা) প্রধান এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে স্বাক্ষরিত ‘শারম আল-শেখ শান্তি চুক্তি’—যা মিশর, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছে।
বিশ্বনেতারা একযোগে এই চুক্তির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে এর বাস্তবায়ন ও স্থায়িত্ব রক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের অঙ্গীকার করেন।
আলোচনায় উঠে আসে—চুক্তির আওতায় গাজায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি, বন্দি ও জিম্মিদের বিনিময়, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং মানবিক ও ত্রাণ সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়গুলো। এ উপলক্ষে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর নেতারা চুক্তি সমর্থনে আনুষ্ঠানিক দলিলে স্বাক্ষর করেন।
ট্রাম্প পরিকল্পনা ও মিশরের নেতৃত্বের প্রশংসাসম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা ও যুদ্ধ অবসানে তার ভূমিকার প্রশংসা করা হয়। একই সঙ্গে কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকারও উচ্চ মূল্যায়ন করেন উপস্থিত নেতারা।
প্রেসিডেন্ট সিসির নেতৃত্বে মিশরের মানবিক তৎপরতা ও মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা—যার ফলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে—তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
গাজা পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক সমাধানের পথসম্মেলনে আলোচনা হয় গাজা পুনর্গঠনের পাশাপাশি শাসনব্যবস্থা, নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমাধানের কাঠামো নিয়ে।
নেতারা জোর দিয়ে বলেন, এখন সময় এসেছে স্থায়ী শান্তির জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণের, যেন মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ দীর্ঘদিনের সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পায়।
ফিলিস্তিনের প্রতি মিশরের অকুণ্ঠ সমর্থনপ্রেসিডেন্ট সিসি বলেন, মিশর অর্ধশতাব্দী আগে এই অঞ্চলে শান্তির বীজ বপন করেছিল, আজ আমরা সেই শান্তির নতুন দিগন্ত দেখতে পাচ্ছি। মিশর ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার—বিশেষত স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার—রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ফিলিস্তিনিরা যেন গাজা ও পশ্চিম তীরসহ পূর্ব জেরুজালেমে নিজেদের বৈধ নেতৃত্বের অধীনে ১৯৬৭ সালের সীমারেখা অনুযায়ী স্বাধীন রাষ্ট্রে শান্তিতে বসবাস করতে পারে—এই লক্ষ্যেই মিশর কাজ করবে।
সম্মেলন শেষে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো—ন্যায়, সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গঠিত এক শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে। মিশরীয় নেতৃত্বে এই কূটনৈতিক সাফল্য শুধু গাজা নয়, গোটা বিশ্বের জন্য শান্তির বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
“City of Peace” আবারও প্রমাণ করল—শান্তির ভাষাই মানবতার ভাষা।
এমআরএম/জিকেএস