দেশজুড়ে

হেভিওয়েটদের পদচারণায় সরগরম ভোটের মাঠ

সখীপুর ও বাসাইল উপজেলা নিয়ে টাঙ্গাইল-৮ আসন গঠিত। এ আসনটি জেলা তথা সারা দেশের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর জন্য আসনটি সবসময়ই আলোচিত। অপরদিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান। এছাড়া জামায়াতে ইসলামের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন শফিকুল ইসলাম খান।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রার্থী গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে আসনে মূল লড়াই হবে কাদের সিদ্দিকী ও আহমেদ আজম খানের মধ্যে, এমনটাই ভাবছেন স্থানীয়রা।

বিগত নির্বাচনগুলোতে এই আসনে আওয়ামী লীগ ৭ বার, বিএনপি ৩ বার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১ বার ও জাতীয় পার্টি ১ বার জয়লাভ করেছে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে তার নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুনআব্দুর রাজ্জাকের আসন পেতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াতবিএনপিতে আছে পিন্টু, চমক দেখাতে চায় জামায়াত-গণঅধিকার

অপরদিকে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান। এছাড়া লাবীব গ্রুপের চেয়ারম্যান সিআইপি সালাহ উদ্দিন আলমগীর রাসেল, উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ হাবিব এবং এশিয়াটিক গ্রুপের এমডি মনির আহমেদ মনা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল জেলার সহকারী সেক্রেটারি ও বাসাইল উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম খান গণসংযোগ করছেন।

এছাড়া কৃষিবিদ শেখ মোহাম্মদ শফী শাওন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম তালুকদারও ব্যানার পোস্টারের মাধ্যমে প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কাজী মাওলানা আব্দুল লতিফ মিয়া ও খেলাফত মজলিস তাদের প্রার্থী হিসেবে শহীদুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেছে। তবে তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম এখনো লক্ষ্য করা যায়নি।

আরও পড়ুনকারাগারে লতিফ সিদ্দিকী, ভোটের মাঠে বিএনপি-জামায়াতআসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি, চেষ্টায় জামায়াতও

টাঙ্গাইল-৮ আসনের আলোচনা অন্যখানে। এই আসনে বরাবরের প্রার্থী বহুল আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। মুক্তিযুদ্ধের একজন কিংবদন্তি বীর। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে এক নামেই চেনে সারা দেশের মানুষ। তার সবচেয়ে বড় শক্তি মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়। গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হেরে যান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয় পেয়েছিলেন ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট। নিকটতম প্রার্থী হিসেবে কাদের সিদ্দিকী (গামছা) পান ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট।

আগামী নির্বাচনে এই আসনে কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিএনপির হয়ে লড়তে পারেন আহমেদ আজম খান। আজম খানের প্রধান শক্তি বিএনপির দলীয় ভোটব্যাংক। টাঙ্গাইল-৮ আসনে বিএনপির একটি শক্তিশালী অবস্থান আছে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের কাতারে ছিলেন আহমদ আজম খান। টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে তার দীর্ঘদিনের পদচারণা। এবারও নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় বেশ সক্রিয় তিনি। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন রাজনৈতিক কর্মসূচি।

তবে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী লাবীব গ্রুপের চেয়ারম্যান সিআইপি সালাহ উদ্দিন আলমগীর রাসেলও ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

আরও পড়ুনবিএনপিতে বিভক্তি, জামায়াতসহ অন্য দলে একক প্রার্থীজিততে মরিয়া বিএনপি, মাঠে জামায়াত, প্রতীকের অপেক্ষায় এনসিপি হারানো আসনে জিততে চায় বিএনপি, আশাবাদী জামায়াত-গণঅধিকার

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এই আসনে জয় পান আওয়ামী লীগের ফজলুর রহমান ফারুক। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মোরশেদ আলী খান পন্নী জয়লাভ করেন। ৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে শওকত মোমেন শাহজাহান ও ৮৮ সালে মোরশেদ আলী খান পন্নী জাতীয় পার্টি থেকে জয় লাভ করেন।

এরপর ১৯৯১ সালে এই আসনে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত হন করটিয়া জমিদার পরিবারের উত্তরসূরি হুমায়ুন খান পন্নী। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও হুমায়ুন খান পন্নী বিএনপি থেকে জয়লাভ করেন। তবে এরপর থেকে আর এ আসনে বিএনপি জয়লাভ করতে পারেনি।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জয়লাভ করেন। কাদের সিদ্দিকী ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে গেলে সংসদ সদস্য পদ হারান। পরে এ আসনটি শূন্য হলে ১৯৯৯ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে শওকত মোমেন শাহজাহান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে পরাজিত করে জয়লাভ করেন। এসময় কাদের সিদ্দিকী নিজেই গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

পরবর্তীতে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাদের সিদ্দিকী। সেবার প্রথমবারের মতো বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেন আহমেদ আজম খান।

২০০৮ সালের নির্বাচনে শওকত মোমেন শাহজাহান আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। তখন কাদের সিদ্দিকী ও বিএনপির আহমেদ আজম খান পরাজিত হন। ২০১৪ সালের দশম নির্বাচন থেকে ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালে শওকত মোমেন শাহজাহান, ২০১৮ সালে জোয়াহেরুল ইসলাম ও ২০২৪ সালে অনুপম শাহজাহান জয় নির্বাচিত হন।

এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২ হাজার ৬২৪ জন। নিবন্ধিত নতুন ভোটার ১৭ হাজার ৬৫৯ জন।

বিএনপির প্রার্থী আহমেদ আজম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত সময়ের আন্দোলনে আমার অনেক ভূমিকা রয়েছে। আমি অনেক নির্যাতন সহ্য করেছি। আশা করছি সব কিছু বিবেচনায় দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। দলের মনোনয়ন পেলে আশা করছি নির্বাচনে বিজয়ী হবো। নির্বাচনে জয়ী হয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করবো।’

বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী লাবীব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আলমগীর রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। অনেক আগে থেকেই এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। তবে এবার বিএনপি থেকে যদি মনোনয়ন পাই, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য আরও কাজ করতে পারবো।’

উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি শেখ মুহাম্মদ হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, ‘৩০ বছরের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারে আমাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হয়ে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে উপহার দিব।’

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সখীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন সজিব জাগো নিউজকে বলেন, ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যতগুলো নির্বাচন করেছেন তার মধ্যে ৯৯ সালে মানুষের বেশি সাপোর্ট ছিল। আমরা মনে করছি এবার উনার প্রতি মানুষের আস্থা সবচেয়ে বেশি। কাদের সিদ্দিকী এবার গামছা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। আমরা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি, এর মধ্যে মানুষের ব্যাপক সাপোর্ট পাচ্ছি।’

জামায়াতের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষ নতুন কিছু চাচ্ছে। আশা করছি জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। দুই উপজেলা অনেকটা উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। আমি সুযোগ পেলে নতুন মুখ হিসেবে এসব অবহেলিত অনেক এলাকায় কাজ করবো। একইসঙ্গে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত উপজেলা গড়ে তুলবো।’

এমএএএন/এফএ/এমএমএআর/জিকেএস