শরতের শেষ থেকে শীতের শুরু — এই সময়টায় বাজারে মেলে বাদামি রঙের নরম, মিষ্টি ফল সফেদা। অনেকে একে শুধু স্বাদ ও অনন্য মিষ্টি ঘ্রাণের জন্য পছন্দ করেন, কিন্তু সফেদাকে আলাদা করে এর উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক শর্করা, ফাইবার এবং খনিজের অনন্য ভারসাম্য।
১. প্রাকৃতিক শক্তির সেরা উৎস
সফেদাকে ‘ন্যাচারাল এনার্জি বুস্টার’ বলা হয় কারণ এতে থাকে গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ ও সুক্রোজ—তিন ধরনের প্রাকৃতিক চিনি যা শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
জার্নাল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-এর গবেষণায় দেখা গেছে, সফেদায় থাকা এই প্রাকৃতিক শর্করা শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ক্লান্তি দূর করে ও মস্তিষ্কে এনার্জি সরবরাহ করে।
২. হজমে সহায়তা
সফেদার দ্বিতীয় বড় গুণটি হলো এর ফাইবারের পরিমাণ। প্রতি ১০০ গ্রাম সফেদায় থাকে প্রায় ৫ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সায়েন্স-এর তথ্যমতে, সফেদার প্রাকৃতিক এনজাইম পাকরসের নিঃসরণ বাড়ায়, ফলে খাবার সহজে হজম হয় এবং গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কমে।
৩. হৃদযন্ত্রের যত্নে পটাসিয়াম ও আয়রন
সফেদার বিশেষত্ব হলো এতে একসঙ্গে থাকে পটাসিয়াম ও আয়রন, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও রক্ত সঞ্চালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর গবেষণায় বলা হয়, সফেদার মতো পটাসিয়ামসমৃদ্ধ ফল নিয়মিত খেলে রক্তচাপ স্থিতিশীল থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
৪. মানসিক প্রশান্তি ও ঘুমের উন্নতি
অন্যান্য ফলের তুলনায় সফেদায় আছে এমন কিছু প্রাকৃতিক যৌগ যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায়। এটি স্নায়ু শান্ত রাখতে সাহায্য করে, সুখের অনুভূতি তৈরি করে এবং মানসিক প্রশান্তি আনে।
জার্নাল অব নিউরোসাইকোলজিকাল হেলথ-এর গবেষণায় দেখা গেছে, সফেদায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম উদ্বেগ কমিয়ে ঘুমের মান উন্নত করে।
৫. ত্বক ও চুলের যত্নে অনন্য প্রভাব
সফেদায় ভিটামিন এ, সি ও ই–এর সমন্বয় ত্বকের পুনর্গঠনে কাজ করে। এটি কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বককে টানটান ও উজ্জ্বল রাখে।জার্নাল অব ডার্মাটোলজিকাল রিসার্চ বলছে, সফেদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয় এবং চুলের গোড়া মজবুত করে।
তবে যেহেতু সফেদা প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ ফল, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে পরিমিত খাওয়া জরুরি। বেশি পাকলে এতে চিনি মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়, যা রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। সকালে বা দুপুরে এটি খাওয়া সবচেয়ে উপকারী, কারণ তখন শরীর শক্তি সবচেয়ে ভালোভাবে শোষণ করতে পারে।
সূত্র: জার্নাল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সায়েন্স, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন, জার্নাল অব নিউরোসাইকোলজিকাল হেলথ, জার্নাল অব ডার্মাটোলজিকাল রিসার্চ
এএমপি/এএসএম