এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলই জীবনের শেষ জিনিস নয়। প্রতি বছরই আমরা দেখি- পরীক্ষায় ফেল করা বা প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ার পর কিছু শিক্ষার্থী চরম পদক্ষেপ নেন, এখন কথা হচ্ছে ফেল করা কি সত্যিই জীবনের চরম ব্যর্থতা?
ব্যাপারটা হলো পরীক্ষার ফলাফল একজন শিক্ষার্থীকে অল্প সময়ের মধ্যে মানসিক চাপ, পারিবারিক প্রত্যাশা, কিংবা শারীরিক অসুস্থতা প্রভাব ফেলে। অকৃতকার্যদের পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা পরিবার কেউ দাঁড়ায় না। ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে বেশি হতাশ হন তাদের বাবা-মা-ভাই-বোন, পরিবার-পরিজন। এছাড়া পরিবার এমনকি শিক্ষাব্যবস্থার দৃষ্টিতে পরীক্ষার ফলই হয়ে ওঠে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি। ফলে অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের মন ভেঙে যায় এবং কেউ কেউ আত্মহননের মতো চরম সিদ্ধান্ত বেছে নেয়। তবে আত্মহত্যা সমস্যার সমাধান নয়।
মনোবিজ্ঞানীরা জানান, ব্যর্থতা হলো শেখার সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ভারতের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ব্যর্থতাকে শেখার ধাপ হিসেবে নিয়ে থাকে, তাদের পরবর্তী জীবনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ বেশি। তাই, ‘ফেল’ মানে কেবল সাময়িক বিরতি, জীবনের শেষ অধ্যায় নয়।
কিন্তু একজন অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থী মানসিক চাপ বা হতাশা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগে থেকে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যদি তার আশেপাশের মানুষ একটু খেয়াল করেন, তাহলে এমন অনেক ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১. কঠিন পরিস্থিতিতে হাল ছেড়ে দেবার কথা বলা
আপনার কাছের কেউ যদি বারবার বলে- ‘আমার আর বেঁচে থাকার কোনো মানে নেই’, ‘সব শেষ করে ফেললেই ভালো’, ‘আমি সবার বোঝা হয়ে গেছি’ - তাহলে একে অবহেলা করবেন না।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এবং আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন এর গবেষণা বলছে, এমন কথাগুলো সরাসরি আত্মহত্যাপ্রবণ চিন্তার ইঙ্গিত হতে পারে।
২. আচরণে পরিবর্তন
শুধু কথায় নয়, আচরণেও পরিবর্তন আসতে পারে-১. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির প্রতি অবহেলা। যেমন: খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া।২. হঠাৎ বন্ধু বা পরিবারের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া।৩. নিজের প্রিয় জিনিসপত্র অন্যকে দিয়ে দেওয়া।৪. বেপরোয়া কাজ শুরু করা। ৫. দীর্ঘদিন হতাশার পর হঠাৎ অস্বাভাবিক চুপ হয়ে যাওয়া।৬. কখনো মনমরা হয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখা, আবার কিছুক্ষণ পরে খুব উৎফুল্ল হয়ে সবার সঙ্গে মেশা।
পরিস্থিতি বেশি খারাপ মনে হলে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। যেমন-১. যদি মনে হয় সে ঝুঁকিতে আছে, একা ছেড়ে দেবেন না।২. পরিবারকে জানান।৩. স্থানীয় জরুরি হেল্পলাইন বা চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন।৪. প্রয়োজনে কাউন্সেলর বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।৫. ফেসবুক ও নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক উদযাপন দেখা থেকে বিরত রাখা। ৬. কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইসাইড সিরিওসিটি রেটিং স্কেলটি এখন আত্মহত্যার ঝুঁকি নিরূপণে বিশ্বজুড়ে ব্যবহার হচ্ছে। এটি একটি সহজ টেস্ট যা একজনের আত্মহত্যার চিন্তা ও ঝুঁকি যাচাই করতে ব্যবহার করা হয়। এতে প্রশ্ন করা হয়, কেউ কি আত্মহত্যার কথা ভাবছে, পরিকল্পনা করছে বা আগে কোনো চেষ্টা করেছে কি না। ডাক্তার বা কাউন্সেলর এটি ব্যবহার করে দ্রুত ঝুঁকি বুঝে সাহায্যের ব্যবস্থা করতে পারে। বিশেষজ্ঞের সাহায্যে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।৭. অভিভাবকদের বড় দায়িত্ব হলো - সন্তান ফলাফল খারাপ করলে তাদের দোষারোপ না করা। বরং পাশে দাঁড়ানো উচিত। এক কাপ চা হাতে বসে বলা- তুমি পারবে, আবার চেষ্টা করো - এই কথাটাই অনেক সময় একটি জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।
একটি পরীক্ষায় ফেল করা মানে জীবনে হেরে যাওয়া নয়। ব্যর্থতা নয়, পুনরায় উঠে দাঁড়ানোর সাহসই মানুষকে সফল করে তোলে। তাই আত্মহত্যা নয়—আশাই জীবনের আসল উত্তর।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ, আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন আরও পড়ুন:ফলপ্রত্যাশীদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণব্যর্থতায় ভেঙে পড়লেও উঠে দাঁড়ানোর উপায় আছে
এসএকেওয়াই/এএমপি/এএসএম