জাতীয়

শাহজালালে আগুনে বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির শঙ্কা, উদ্বেগ ব্যবসায়ীদের

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এই অগ্নিকাণ্ডে শুধু ব্যবসায়ীরা নন, দেশের সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থাও বড় ধরনের ধাক্কা খাবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএইএবি) প্রেসিডেন্ট কবীর আহমেদ খান বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুনে সরাসরি কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে, তার হিসাব এখনই জানার সুযোগ নেই। কিন্তু এ কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমদানি ও রপ্তানিতে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে।

আইএইএবি বলছে, এয়ার কার্গোতে থাকা আমদানি ও রপ্তানির মালামালের মধ্যে তৈরি পোশাক এবং টেক্সটাইল খাতের মালামাল থাকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। দেশে বর্তমানে ৬০টির বেশি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার কার্গো কুরিয়ার সেবার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। আর আগুন লাগা কার্গো ভিলেজে মূলত আমদানি ও রপ্তানির জন্য অপেক্ষমাণ পণ্য সংরক্ষিত থাকে।

কবীর আহমেদ শনিবার রাতে বলেন, কার্গো এক্সপ্রেস, ওয়্যারহাউজ, পণ্যবাহী বিমান, বিমানবন্দরের অবকাঠামোসহ সামগ্রিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে শুধু ব্যবসায়ীরা নন, দেশের সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থাও বড় ধরনের ধাক্কা খাবে।

একই কথা বলেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান।

তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, আর তা হতে পারে এক বিলিয়ন ডলারেরও ওপরে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরাসরি আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও সময়মতো কাঁচামাল না পাওয়ায় অর্ডার ক্যানসেল (বাতিল), কয়েকগুণ বাড়তি ব্যয়ে এয়ারে পাঠাতে বাধ্য হওয়া, ডিসকাউন্ট, সময় মতো বায়ারের স্যাম্পল না পাওয়ায় অর্ডার কনফার্ম করতে না পারাসহ আরও কিছু ক্ষতি রয়েছে। যার কারণে দেশের এ খাতে এক দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অন্যদিকে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, যাত্রীসেবার পাশাপাশি পণ্য আমদানি-রপ্তানির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য দেশের ব্যবসায়ী সমাজ এ বিমানবন্দর অধিকহারে ব্যবহার করেন। এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ফলে স্থানীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের নিকট পণ্য পরিবহনে অনিরাপত্তা ও অনিশ্চয়তায় দেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সেই সঙ্গে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা উদ্যোক্তাদের আস্থা ও ব্যবসা পরিচালনা কার্যক্রম আরও সংকটে ফেলবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এছাড়া বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশনসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেন। আগুনে নেভাতে গিয়ে আনসার বাহিনীর অন্তত ২৫ জন সদস্য আহত হন।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর রাত ৯টার দিকে বিমানবন্দর চালু হয়। প্রথম ফ্লাইট রাত ৯টার পর বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।

এনএইচ/ইএ/জিকেএস