‘কী ছিলে আমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’— নব্বইয়ের দশকে এই গানগুলো মাতিয়েছিল সংগীতাঙ্গন। প্রেম আর অভিমানের সুরে মন জয় করেছিলেন গায়ক মনি কিশোর। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে যেন হারিয়েই গেলেন তিনি। আলোচনার কেন্দ্র থেকে সরে গিয়ে একসময় নিভৃতে কাটিয়েছেন জীবন। আর সেই নীরবতার মাঝেই, গত বছরের ২০ অক্টোবর, রাজধানীর রামপুরার বাসায় মিলেছিল তার নিথর দেহ।
নড়াইলের লক্ষ্মীপুরে জন্ম নেওয়া মনি কিশোর ছোটবেলা থেকেই সংগীতনেশায় বড় হয়েছেন। আশির দশকের শেষের দিকে ঢাকায় এসে গানে পা রাখেন তিনি। খুব দ্রুতই শ্রোতাদের নজর কাড়েন তার স্বকীয় কণ্ঠে। নব্বইয়ের দশকের মিক্সড অ্যালবাম যুগে একের পর এক হিট গান উপহার দেন। ‘কী ছিলে আমার’ গানটি তাকে জনপ্রিয়তার শিখরে নিয়ে যায়।
প্রেম, অভিমান আর স্মৃতির আবেগময় কথায় তার গানে যেন মিশে থাকত এক অনন্য মায়া। রেডিও ও টেলিভিশনে নিয়মিত গাইতেন না, তবে অডিও অ্যালবামের জগতে ছিল তার রাজত্ব। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।
২০০০ সালের পর থেকেই ধীরে ধীরে সংগীত থেকে দূরে সরে যান মনি কিশোর। অভিমানে নিজেকে আড়াল করে ফেলেন। অনেক বছর পর, গত বছর এক সাক্ষাৎকারে জানিয়ে ছিলেন নতুন করে গানে ফেরার কথা। বলেছিলেন, পুরোনো গানগুলো নতুন করে ইউটিউবে প্রকাশ করবেন। ‘কী ছিলে আমার’ গানটি নতুনভাবে উপস্থাপন করারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই আশার তার পূরণ হয়নি।
তার গাওয়া গানগুলো এখনও ইউটিউবে লাখো ভিউ পায়, স্টেজ শোতে তরুণ শিল্পীরা গেয়ে থাকেন সেই পুরোনো সুরগুলো। অথচ গানের মূল শিল্পীকে চেনেন না অনেকেই— এই বাস্তবতা কষ্ট দিয়েছিল তাকে।
গত বছরের অক্টোবরে রামপুরার ‘পপি’ ভবনের ফ্ল্যাটে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছিলেন মনি কিশোর। কয়েকদিন ধরে তার রুম বন্ধ ছিল। গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়, পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে তার লাশ। জানা যায়, তিনি ডায়াবেটিস ও মানসিক চাপে ভুগছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে বিচ্ছেদ হয়েছিল তার। সাবেক স্ত্রী শামীমা চৌধুরী ও একমাত্র কন্যা নিন্তি চৌধুরী এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।
আরও পড়ুন:মনি কিশোরের মৃত্যু নিয়ে যা বললেন আদনান বাবুইসলাম গ্রহণ করেছিলেন মনি কিশোর, তার ইচ্ছেতেই হবে দাফন
১৯৬১ সালের ৯ জানুয়ারি নড়াইলের লক্ষ্মীপুরে জন্ম মনি কিশোরের। আলো থেকে ছায়ায় ঢেকে যাওয়া এই গায়ক রেখে গেছেন অজস্র স্মৃতি— আর কিছু কালজয়ী গান, যা আজও ছুঁয়ে যায় শ্রোতাদের হৃদয়।
এমএমএফ/এএসএম