জাতীয়

রাজধানীতে ভবনের উচ্চতা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর সুযোগ

রাজধানীতে ভবনের উচ্চতা সীমা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর সুযোগ রেখে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ ২০২২-৩৫) সংশোধনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা-২০২৫ (খসড়া) অনুমোদন পেয়েছে। খুব শিগগিরই সংশোধিত ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সভাপতিত্বে গত রোববার (১৯ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।

বাড়ছে ভবনের উচ্চতা ও জনঘনত্ব

সংশোধিত ড্যাপে রাজধানীকে আগের ২৭৫ ব্লকের পরিবর্তে ৬৮ ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। গাজীপুরের অংশ বাদ দিয়ে ঢাকা এখন এক হাজার ৯৪ বর্গকিলোমিটারে সীমিত করা হয়েছে। ভবনের উচ্চতা বাড়ার পাশাপাশি সর্বোচ্চ জনঘনত্ব ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে।

রাজউক সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জ, হেমায়েতপুর, কাশিপুর, কাঁচপুর, ভুলতা, গাউছিয়াসহ ঢাকার আশপাশের এলাকায় আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতার ভবন নির্মাণের সুযোগ থাকছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির থাকা আবাসন খাতে নতুন গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নতুন ইমারত বিধিমালা

খসড়া ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা-২০২৫-এ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। অকুপ্যান্সি সার্টিফিকেট একবার নিলেই আজীবনের জন্য কার্যকর থাকবে। আগে প্রতি পাঁচ বছর পর নবায়ন বাধ্যতামূলক ছিল। পাঁচ কাঠা বা তার বেশি জমিতে স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নির্মাণ বাধ্যতামূলক।

ভবন নির্মাণের ফি দিতে হবে নকশা অনুমোদনের পর, আবেদন করার সময় নয়। আবেদন নিষ্পত্তির সময়সীমা ৪৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন করা হয়েছে। এছাড়া গ্রিন বিল্ডিং প্রণোদনা ও আপিল কমিটি গঠনের বিধানও যুক্ত করা হয়েছে।

বন্যা প্রবাহ অঞ্চল

সংশোধিত ড্যাপে ‘মুখ্য জলস্রোত’ ও ‘সাধারণ জলস্রোত’ একীভূত করে ‘বন্যা প্রবাহ অঞ্চল’ ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) ও জনঘনত্ব পুনর্মূল্যায়ন করে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে কৃষিজমিতে স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

কোথায় কতটা বাড়ছে ফার

রাজউকের আওতাধীন অনেক এলাকায় ফার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন মিরপুরে ২.৮ থেকে ৩.৪, দক্ষিণ খানে ২ থেকে ৩.১, মহাখালীতে ২.২ থেকে ৩.৩, মোহাম্মদপুরে ২.৭ থেকে ৩.৪, পুরান ঢাকায় ২.৬ থেকে ৩.৩, রূপগঞ্জে ২ থেকে ৩.২, সাভারে ২ থেকে ৩.৪, খিলক্ষেতে ২ থেকে ৪.৪ ও মিরপুর ডিওএইচএসে ২.৫ থেকে ৪.৮ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ব্লকভিত্তিক উন্নয়নে একাধিক প্লট একীভূত করা হলে নির্ধারিত ফারের ওপর অতিরিক্ত ০.২৫ থেকে ০.৭৫ পর্যন্ত বোনাসও দেওয়া হবে।

দ্বিগুণ ফ্লোর ইউনিট

ভবনের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোর ইউনিটও বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যেমন পুরান ঢাকায় ১.২ থেকে ৩.১, দক্ষিণ খানে ১.৪ থেকে ২.৯, মিরপুরে ১.৭ থেকে ২.৯, মোহাম্মদপুরে ১.৭ থেকে ২.৮ এবং টঙ্গী, রূপগঞ্জ ও সাভারে ১.২ থেকে ৩ করা হয়েছে। এর ফলে ফ্ল্যাট নির্মাণের সুযোগ আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া

পরিবেশবাদীরা বলছেন, সংশোধনের বেশির ভাগ পরিবর্তন ব্যবসায়িক স্বার্থে আনা হয়েছে। তাদের মতে, ভবনের উচ্চতা ও জনঘনত্ব বাড়লে রাজধানীর যানজট ও বাসযোগ্যতা সংকট আরও তীব্র হবে। অন্যদিকে আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।

বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘ড্যাপে ভবনের উচ্চতা সীমা বাড়ানোয় স্থবির আবাসন খাত আবারও চাঙা হবে। এতে ব্যবসা যেমন এগোবে, তেমনি সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গতি আসবে।’

রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সংশোধিত ড্যাপ প্রণয়নে সব পক্ষের মতামত নেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাস্তব অবস্থা ও পরিবেশ সুরক্ষা বিবেচনায়ই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

ইএআর/একিউএফ/এমএস