দেশজুড়ে

হারানো আসন ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি, মাঠে আছে জামায়াত-এনসিপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় ভোটের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন উপলক্ষে এরইমধ্যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থীরা। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী আলোচনায় নেই।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ড, সোনারগাঁ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও সোনারগাঁ পৌরসভা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন। এ আসনটিতে এ পর্যন্ত পাঁচজন ১০ বার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছেন। যার মধ্যে বিএনপির প্রার্থী চারবার, জাতীয় পার্টির চারবার আর আওয়ামী লীগের দুইবার। আয়তনে বড় সোনারগাঁ উপজেলা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা শিল্প-বাণিজ্যের পাশাপাশি কৃষিখ্যাতে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। ঢাকাঘেঁষা হওয়ায় আসনটির গুরুত্বও অনেক বেশি।

আগে ঢাকা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল নারায়ণগঞ্জ। ১৯৮৪ সালে এই জেলা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এরপর ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মোবারক হোসেন এ আসন থেকে জয়লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির আবু নূর মোহাম্মদ বাহাউল হক। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি ও জুনের নির্বাচন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম জয়লাভ করেন।

আরও পড়ুন- গাজীর আসনে বিএনপিতে প্রার্থীজট, সুসংগঠিত জামায়াতআড়াইহাজারে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুল্লাহ আল কায়সার নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। সেই দুটি নির্বাচনে জয়ী হন জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবার জয়ী হন আওয়ামী লীগের আবদুল্লাহ আল কায়সার।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৬ জন এবং নারী ২ লাখ ৮৭ হাজার ২০৪। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ২ জন।

গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে এবার ভোটের লড়াইয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। প্রায় দেড় যুগ পর আসনটি ফিরে পাওয়ার প্রতিযোগিতায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী প্রথমবারের মতো এই আসনটি দখলে নিতে চাচ্ছে। আর এনসিপির নেতাকর্মীদের ধারণা, নতুন বাংলাদেশে জনতা এনসিপিকেই জয়ী করবে।

আরও পড়ুন- আব্দুর রাজ্জাকের আসন পেতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াতবিএনপিতে আছে পিন্টু, চমক দেখাতে চায় জামায়াত-গণঅধিকার

আসন্ন নির্বাচন ঘিরে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. রেজাউল করিম, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. ওয়ালিউর রহমান আপেল ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোজাহিদ মল্লিক।

ধানের শীষের এই সাত মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির শুরা সদস্য প্রিন্সিপাল ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া ও এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন মাহমুদ। তবে এনসিপি এখনো তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি।

বিএনপিতে বিভক্তি, জামায়াতসহ অন্য দলে একক প্রার্থীজিততে মরিয়া বিএনপি, মাঠে জামায়াত, প্রতীকের অপেক্ষায় এনসিপি

বিএনপির তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সবাই তার হয়ে মাঠে কাজ করবে। তবে কেন্দ্র পর্যায়ে তৃণমূলের আবেদন থাকবে এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হোক যাকে বিগত স্বৈরাচার আমলে তারা পাশে পেয়েছেন।

দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে এবারের সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা ভোটারদের।

ভোটাররা বলছেন, পরিবর্তিত দেশে স্বৈরাচারী মনোভাবের আর কাউকে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। দুঃশাসন ও স্বৈরাচারী কার্যক্রমের ফলে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাসনামলকে মাথায় রেখে তারা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন। মূলত দল কিংবা মার্কায় নয় এবারের ভোটের মাঠ হবে ব্যক্তির কর্মের ওপর।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, ‘আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনীত করবে এবং আমি জয়ী হবো। বিগত ১৬ বছর আমি মাঠে ছিলাম। কিন্তু ৫ আগস্টের পর নতুন অনেক কোকিল এসেছে। আমি জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ-৩ ও ৪ দুটি আসন থেকে নির্বাচন করতে কাজ করে যাচ্ছি। দল আমাকে যেখানে মনোনীত করবে জয় উপহার দিবো ইনশাআল্লাহ। তবে দল যদি আমাকে মনোনীত না করে দলের অন্য কাউকে দেয়, তার পক্ষেই কাজ করবো। দলের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের দায়িত্ব পালন করায় এবং সিদ্ধিরগঞ্জে আমার বাড়ি হওয়ায় এখানকার মানুষ আমাকে সবসময় ভালোবাসা দিয়েছেন। সোনারগাঁ উপজেলার মানুষেরাও আমাকে নিয়ে প্রত্যাশা করেন যে তারা আমাকে নির্বাচিত করবেন।’

আরও পড়ুন- কারাগারে লতিফ সিদ্দিকী, ভোটের মাঠে বিএনপি-জামায়াতআসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি, চেষ্টায় জামায়াতও

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল বলেন, ‘সোনারগাঁবাসী আমাকে ভালোবাসেন। তাই আমাকে তারা এমপি নির্বাচিত করার অপেক্ষায় রয়েছেন। আমি তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটছি। ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. ওয়ালিউর রহমান আপেল জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘আমি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছি। নিয়মিত আয়োজন হচ্ছে, মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। সোনারগাঁবাসী আমাকে ভালোবাসে। আমি বিশ্বাস করি দল আমাকে মনোনীত করলে দলকে আসনটি উপহার দিতে পারবো। আমার ফিল্ড আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।’

বক্তব্যের জন্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. রেজাউল করিমকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী প্রিন্সিপাল ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার সুযোগ হয়েছে। মানুষ ইতিপূর্বে দুই দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেখলো, এবার তারা নতুন দলকে ক্ষমতায় দেখতে উৎসুক হয়ে আছে। অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামীকে চাচ্ছে। আমরা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছি। আলহামদুলিল্লাহ মানুষ আমাদের গ্রহণ করছে। ভোটারদের সঙ্গে যখন কথা বলি তখন তারা আমাদের আশ্বস্ত করছে। আল্লাহর রহমতে আমাদের ফিল্ড ভালো আছে।’

এনসিপির জাতীয় যুবশক্তির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক তুহিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা নিয়মিত জনসংযোগ করছি। বৈঠকের মাধ্যমে ভোটারদের নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছি। মানুষ এখন তরুণ নেতৃত্বে আগ্রহী।’

বড় দুই দল বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে লড়াই কতটা এগোতে পারছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তুহিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা অবশ্যই নিজেদের এগিয়ে রাখছি। মানুষের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি।’

এফএ/এমএমএআর/জেআইএম