সমুদ্রকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা করতে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের ইনানী বীচে দিনব্যাপী ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ পরিচালনা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এই স্টোরে কুড়ানো প্লাস্টিক জমা দিয়ে উখিয়ার সমুদ্র পাড়ের ৫০০ প্রান্তিক পরিবার বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দিনব্যাপী এই কার্যক্রমে এক লাখ টাকার খাদ্যদ্রব্য ও প্রয়োজনীয় পণ্যের বিনিময়ে প্রায় দেড় মেট্রিক টন (১৫০০ কেজি) প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা ও উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চলা কার্যক্রমে প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাদ্যসামগ্রী পেয়ে অভিভূত প্রান্তিক মানুষ। প্লাস্টিকের বোতল জমা দিয়ে শিশুরা পেয়েছে ছবি সম্বলিত নানা গল্পের বই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ১৯ ধরনের নিত্যপণ্য দিয়ে সুপারশপ সাজায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা। যেখানে এককেজি প্লাস্টিকের বিপরীতে দেওয়া হয় ৬টি ডিম বা এককেজি চাউল, ৫ কেজিতে এক লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজিতে এক কেজি ডাল পাওয়া যায়।
প্লাস্টিক জমা দিয়ে পণ্য নিতে আসা উখিয়ার সোনারপাড়ার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বলেন, মাইকিং শুনে সপ্তাহ ধরে প্লাস্টিক কুড়িয়ে ১০ কেজি প্লাস্টিক জমিয়েছিলাম। এগুলো দিয়ে প্রায় ৬০০-৭০০ টাকার বাজার পেয়েছি। কুড়ানো প্লাস্টিক ভাংগারির দোকানে নিয়ে গেলে ২০০ টাকার বেশি পাওয়া যেত না। এরকম বাজার বার বার বসলে আমি ও আমার মতো দরিদ্ররা বীচ এবং আশপাশ থেকে প্লাস্টিক কুড়িয়ে জমিয়ে রাখবো।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মোবারক বাবু বলেন, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গত কয়েক বছর ধরে পুরো কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে ৬মাস ব্যাপী প্লাস্টিক সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। চলতি কার্যক্রমে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে সমুদ্র ও আশপাশে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক এক লাখ কেজি সংগ্রহ করে শতভাগ রিসাইকেল করার পরিকল্পনা নিয়ে আগানো হচ্ছে। গত ৩ আগস্ট সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতে শুরু হওয়া সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ কর্মসূচিতে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে ২৩ হাজার ৫০০ কেজি প্লাস্টিক সংগ্রহ করে রিসাইকেল করা হয়েছে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক রানা আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক ব্যবহার ও সংগ্রহে মানুষের অভ্যাসগত পরিবর্তন ছাড়া প্লাস্টিক দূষণ রোধ অসম্ভব। তাই মানুষ ও পর্যটকদের মাঝে অভ্যাসগত পরিবর্তন ও সচেতনতা তৈরিতে আমরা ইনোভেটিব সব আইডিয়া নিয়ে কাজ করছি। সংগৃহিত প্লাস্টিকের একটা অংশ দিয়ে সৈকতে ‘ভাস্কর্য’ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন যৌথভাবে ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ কর্মসূচি করে আসছে।
সায়ীদ আলমগীর/কেএইচকে/এএসএম