বিনোদন

নায়ক রিয়াজের জন্মদিন আজ, কিন্তু তিনি কোথায়

ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল তারকার নাম রিয়াজ। তার পুরো রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে টানা দুই যুগ তিনি ছিলেন ঢালিউডের শীর্ষ জনপ্রিয় মুখ। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। আজ (২৬ অক্টোবর) এই তারকার জন্মদিন। কিন্তু এখন বড় প্রশ্ন- রিয়াজ কোথায় আছেন?

গত বছর ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই নায়ক রিয়াজ লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন। কারণ তিনি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। দলের নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন। সেসময় তার অনেক বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। দলটির অন্যান্য সংস্কৃতিকর্মীর মতো তিনিও আত্মগোপনে চলে যান। তিনি কোথায় আছেন তা কেউ জানে না।

গত কয়েক মাস ধরে চলচ্চিত্রপাড়া, রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে একটাই প্রশ্ন- ‘নায়ক রিয়াজ এখন কোথায়?’ সহকর্মীদের অনেকে বলছেন, তিনি নাকি পরিবারসহ বিদেশে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, রিয়াজ ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় নির্জনতায় গেছেন। তবে এ বিষয়ে রিয়াজ কিংবা তার পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই নীরবতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কৌতূহল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ভক্তরা উদ্বেগ জানাচ্ছেন, আবার অনেকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখছেন- ‘যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন আমাদের প্রিয় নায়ক।’, ‘রিয়াজকে পর্দায় ফিরে দেখতে চাই, আগের মতো হাসতে।’

রিয়াজের সহজ, সাবলীল অভিনয়, মায়াভরা হাসি আর নম্র ব্যক্তিত্ব তাকে পরিণত করেছিল দর্শকের ঘরের মানুষে। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে রিয়াজ তিনবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, অসংখ্য সম্মাননা এবং কোটি ভক্তের ভালোবাসা।

চলচ্চিত্রে তার অনুপস্থিতি স্পষ্ট হলেও, রিয়াজ এখনো বাংলা সিনেমার এক অনুভবের নাম। যারা নব্বইয়ের দশকে বড় হয়েছেন, তাদের চলচ্চিত্র-স্মৃতিতে রিয়াজ এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পর্দায় তার উপস্থিতি মানেই ছিল নরম আলো, প্রেমের গল্প আর জীবনের ছোট ছোট আনন্দের প্রতিফলন।

১৯৭২ সালে ফরিদপুর জেলা সদরের কমলাপুর মহল্লায় রিয়াজের জন্ম। তার ছেলেবেলা কেটেছে ফরিদপুর শহরের সিএনবি স্টাফ কোয়ার্টার্সের চৌহদ্দিতে। বাবা জাইনুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, মা আরজুমান্দ আরা বেগম গৃহিণী। সাত ভাই-বোনের মধ্যে রিয়াজ সবার ছোট।

১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় রিয়াজ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘বাংলার নায়ক’। পরের বছর খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার দিলীপ বিশ্বাসের ‘অজান্তে’ ও মোহাম্মদ হোসেনের ‘প্রিয়জন’ সিনেমায় অভিনয় করেন। ‘প্রিয়জন’ই একমাত্র চলচ্চিত্র যাতে রিয়াজ অকালপ্রয়াত সালমান শাহের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। শাবনূর ও পূর্ণিমার সঙ্গে জুটি বেঁধে সাফল্য পেয়েছেন রিয়াজ।

শাবনূরের সঙ্গে অভিনয় করা উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো ‘মন মানে না’, ‘ভালোবাসি তোমাকে’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘হৃদয়ের বন্ধন’ ও ‘মোল্লাবাড়ীর বউ’। তারা ৪০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। রিয়াজ-শাবনূর জুটির সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘শিরি ফরহাদ’ মুক্তি পায় ২০১৩ সালের ২২ মার্চ।

আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের প্রশংসা করায় বিতর্ক, জবাবে দিলেন নায়ক রিয়াজনায়ক রিয়াজের সেরা যত সিনেমা

অন্যদিকে ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় রিয়াজ-পূর্ণিমা জুটি অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘এ জীবন তোমার আমার’। এ জুটির অন্যান্য সফল চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘শাস্তি’ ও ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’। তারা ৩০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় তাদের সর্বশেষ সিনেমা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’। ২০২২ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর রিয়াজ অভিনীত সর্বশেষ ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমা মুক্তি পায়।

এমএমএফ/এমএস