চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশের গাউসিয়া আবাসিক এলাকার সড়ক মেরামতের কাজ ফেলে পাালিয়েছেন ঠিকাদার। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারকে বেশি দামে ইট-বালু কেনার চাপ দেওয়ায় তিনি কাজ বন্ধ রেখে পালিয়েছেন। এতে পাঁচদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সড়ক মেরামতের কাজ। ভাঙা ইট, বালু এবড়োখেবড়ো পড়ে থাকার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন এই এলাকার প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা।
জানা যায়, পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ গাউসিয়া আবাসিক এলাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। আবাসিক এলাকাটি সিটি করপোরেশনের অধীনে হলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় সড়ক তৈরি করে লোকজন চলাচল করলেও নিয়মিত পৌরকরসহ নানান সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করেন আবাসিকের বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আবাসিক এলাকাটির সড়কের মাঝখানে ভাঙা ইট ও বালুর স্তূপ। নির্মাণাধীন ড্রেনগুলো অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এতে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিকের বাসিন্দারা।
গাউসিয়া আবাসিক মালিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী মুরাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাউসিয়া আবাসিক এলাকাটি গড়ে উঠেছে ২০ বছর আগে। শুরু থেকেই এলাকাটি অবহেলিত। ২০২৪ সালের শুরুতে আবাসিকের সড়ক নির্মাণের জন্য একটি আবেদন করেছিলাম। সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। ঠিকাদার নালা নির্মাণ করার পর্যায়ে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনে ঠিকাদারও কাজ বন্ধ রেখে চলে যান। পরে আবাসিকের বাসিন্দাদের দাবির মুখে কয়েকদিন আগে সিটি করপোরেশন পুনরায় কাজ শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘কাজ শুরুর কয়েকদিন পর ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। পরে আবাসিকের লোকজনের কাছ থেকে শুনেছি হামজারবাগ দিয়ে ইট, বালু আনার পথে ঠিকাদারের কাছ থেকে কারা নাকি চাঁদা চেয়েছে। কাজ বন্ধ রাখার দুই দিন পর ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সর্বশেষ রোববার ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে কারা চাঁদা চেয়েছে ঠিকাদার তাদের নাম বলেননি।’
গাউসিয়া আবাসিকের এক বাাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাউসিয়া আবাসিকের বাইরের হামজারবাগ এলাকার দুই যুবক ঠিকাদারের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছেন। তারা বেশি দামে ইট-বালু সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছেন ঠিকাদারকে।ঠিকাদার রাজি না হওয়ায় তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এতে ঠিকাদার ভয়ে কাজ বন্ধ রেখেছেন।’
কথা হলে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাশেম কনস্ট্রাকশনের পরিচালক বাবুল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাউসিয়া আবাসিকের সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করছিলাম। কাজের ইট-বালুও সাইটে নিয়ে এসেছি। গত বুধবার ইট আনার সময় হামজারবাগের মুখে ইটের ট্রাক আটকে দেওয়া হয়েছে। এজন্য কয়েকদিন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে পুনরায় কাজ শুরু হবে।’ তবে প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান সিদ্দিকী পাভেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাউসিয়া আবাসিকের ড্রেন ও সড়ক উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্পটি নেওয়া হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ফান্ড সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করা যায়নি। এখন প্রকল্পটি সংশোধন করে পুনরায় করা হচ্ছে। সড়ক উঁচুকরণসহ ড্রেন মেরামতে প্রায় ৪ কোটি টাকার কাজ। কাশেম কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছিল। গত সপ্তাহে কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। কিন্তু হামজারবাগ এলাকার সাকিব নামের এক ছেলে ঠিকাদারকে ডিস্টার্ব করছেন। এ কারণে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘মালামাল সরবরাহ নিতে ঠিকাদারকে বাধ্য করার নামে পরোক্ষভাবে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদার আগে থেকেই ইট-বালু কিনে রেখেছেন। ঠিকাদারের নতুন করে ইট-বালুর প্রয়োজন নেই। কয়েকদিন আগে রাস্তায় ইটের ট্রাক আটকে দেওয়া হয়েছে। এতে বৃহস্পতিবার থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি মেয়রকে অবগত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিএমপির পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমানকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এমডিআইএইচ/ইএ/জিকেএস