জাতীয়

আগামী বছর বিশ্ব ইজতেমা নির্বাচনের পর: ধর্ম উপদেষ্টা

আগামী বছর তাবলিগ জামাতের দুইপক্ষের আয়োজনে আলাদা আলাদা বিশ্ব ইজতেমা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

রোববার (২ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে তাবলিগের বিবদমান দুইপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি উপস্থিত ছিলেন।

ইজতেমার তারিখ পরে দুইপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলেও জানান ধর্ম উপদেষ্টা।

তাবলিগের দুইপক্ষ বিবাদে জড়ানোর পর সাধারণত প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আলাদাভাবে তিনদিন করে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‌‘আমরা দুই গ্রুপকে নিয়ে আসন্ন ইজতেমার বিষয়ে আলোচনা করেছি। খুবই পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হয়েছে। যেহেতু সামনে নির্বাচন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন নিয়ে এখন ব্যস্ত, নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়েছে। ইজতেমা করতে গেলে অনেক মানুষের সমাগম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার বিষয় আছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইজতেমা হবে ইলেকশনের পর। নির্বাচনের পর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।’

খালিদ হোসেন বলেন, ‘ইজতেমা যে নির্বাচনের পরে হবে, সেই বিষয়ে উভয়পক্ষ তিন উপদেষ্টার সামনে আমাদের কাছে সম্মতি দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যদি ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে হয়, এরপর রমজানে তো আর হচ্ছে না, হয়তো রমজানের পর (ইজতেমা) হবে।’

‘তবে দুইপক্ষ কবে ইজতেমা করবে সে সিদ্ধান্ত দুপক্ষের সঙ্গে বসে নিতে হবে। তবে নির্বাচন পর সুবিধাজনক সময়ে তারিখ নির্ধারিত হবে। তবে সময়টা এখনো ঠিক হয়নি।’

দুইপক্ষ আলাদাভাবে ইজতেমা করবে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে ইজতেমা একসঙ্গে হওয়ার সুযোগ নেই। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়িয়েছে যে আলাদা আলাদাভাবেই হবে।’

নির্বাচন যদি পিছিয়ে যায় তবে ইজতেমা কবে হবে- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন তো আপাতত পেছানোর কোনো লক্ষণ নেই। নির্বাচন তো ফেব্রুয়ারি প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচন পেছানোর এই মুহূর্তে কোনো পরিকল্পনা নেই। যদি এ রকম কোনো পরিস্থিতি দেখা দেয় তবে আমরা আবার বসবো, কথা বলব কি করা যায় তখন। নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে, এভাবেই আমরা এগোচ্ছি।’

ইজতেমা পেছানোর বিষয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এত বড় একটা সমাবেশ, যেখানে বিদেশি মেহমানরাও থাকেন। এই ঝুঁকিটা সরকারের জন্য নেওয়া উচিত হবে না মনে করে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওনারাও সেটা বুঝতে পেরেছেন।’

বৈঠকে মাওলানা সাদ কান্ধলভীপন্থি মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও জুবায়েরপন্থি মাওলানা মাহফুজুল হক, জুনায়েদ আল হাবিবসহ অন্যান্য মুরব্বীরাও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের দুটি পক্ষ রয়েছে। একপক্ষে রয়েছেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরব্বী মাওলানা সাদ কান্ধলভীপন্থিরা। এই পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাকরাইল মসজিদের আহলে শূরা মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। আরেক পক্ষে রয়েছেন মাওলানা সাদবিরোধী মাওলানা জুবায়ের আহমেদপন্থিরা (শুরায়ে নেজাম)।

মাওলানা সাদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবি-রাসুল ও নবুয়ত এবং মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন- দাবি মাওলানা জুবায়ের ও তার অনুসারীদের।

গত বছর টঙ্গী ইজতেমা মাঠে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে।

এর আগে গত ৩০ জুলাই দুই পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের এমন বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

আরএমএম/এমআরএম/জেআইএম