প্রবাসী আয়ের পর দেশের অর্থনীতিতে আরেকটি ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে। বেড়েছে পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা। তবে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে গতি ফিরছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ঋণপত্র খোলা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ।
খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ঋণপত্র বাড়লেও ঋণপ্রবাহে মন্থরতা। একদিকে এলসি খোলা বাড়লেও বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি উল্টো কমছে। গত আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে, যা গত বছরের আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণপত্র খোলা বাড়লেও প্রকৃত অর্থে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গতি আসেনি। ফলে প্রশ্ন উঠছে কে বা কারা এসব বাড়তি ঋণপত্র খুলছে?
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের, যা গত বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। মূলধনি যন্ত্রপাতিতে ঋণপত্র খোলা ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৭ কোটি ১৬ লাখ ডলার। শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য, পেট্রোলিয়াম ও কাঁচামালের আমদানিতেও ঋণপত্র খোলায় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
আরও পড়ুনক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণে প্রভিশন ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকসরকারি জমি দখলে নিলো এক ব্যাংক, আরেক ব্যাংক তুলছে নিলামে
গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।
রাজনৈতিক পরিবর্তন ও ব্যাংক খাতের প্রভাবঅর্থনীতিবিদদের মতে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসায়িক পরিবেশে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ–সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ী নানা অনিয়মের কারণে আইনি জটিলতায় পড়ায় তাদের ব্যবসার গতি কমেছে। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের কারণে অন্তত ১৫টি ব্যাংক ঋণ বিতরণ কার্যক্রম কমিয়েছে। একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচটি ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
ফলে নতুন বিনিয়োগ ও শিল্প উৎপাদন উভয়ই মন্থর হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বেসরকারি ঋণপ্রবাহে, যা আগস্টে কমে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে, জুলাইয়ে যা ছিল ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত অর্থবছরে আমদানি তলানিতে নামলেও এবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মূলধনি যন্ত্রপাতির ছোট পরিসরে সংযোজন, খাদ্যপণ্যের মৌসুমি আমদানি, সরকারি চাল ও গম আমদানির কারণে এলসি খোলা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এটাকে অর্থনীতির পূর্ণ পুনরুদ্ধার বলা যাবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা এখনো ফেরেনি, তবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে।
ইএআর/ইএ/জিকেএস