দেশজুড়ে

শুধু নামেই কৃষি যন্ত্রপাতি টেস্টিং ও ট্রেনিং সেন্টার

দেশের একমাত্র কৃষি যন্ত্রপাতি টেস্টিং ও ট্রেনিং সেন্টারটি অবস্থিত গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায়। তবে অর্থ সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-২০১৭ সালে প্রায় তিন বিঘা জমির ওপরে ওই এলাকার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় কৃষি যন্ত্রপাতি টেস্টিং ও ট্রেনিং সেন্টার। তবে কখনো সরকারের সুনজরে আসেনি প্রতিষ্ঠানটি। বিগত সময়ে প্রকল্প পরিচালকদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অযত্ন-অবহেলায় এটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

জানা গেছে, প্রকল্পের মেয়াদ শেষে ২০২৪ সালে ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর এক বছরের জন্য ফের অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। কিন্তু অর্থ ছাড় করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ফলে বর্তমানে অলস সময় কাটাচ্ছেন টেকনিশিয়ান, নিরাপত্তা প্রহরী, অফিস স্টাফ, অফিস সহায়কসহ অন্তত ১৮ জন কর্মচারী।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটকটি ভেতর থেকে বন্ধ। একজন নারী জমি থেকে সবজি তুলছেন। ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দুজন ব্যক্তি জমিতে কৃষিকাজ ফেলে ছুটে আসেন। নিজের পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে পরিচিত হলে তারা প্রতিষ্ঠানটির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। কৃষিক্ষেত্রে কর্মদক্ষতার জন্য পুরস্কার পাওয়া সিনিয়র টেকনিশিয়ান ইয়াহিয়া মোল্লা জাগো নিউজকে জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে এক সময়ে প্রতি ব্যাচে কৃষি সংশ্লিষ্ট অন্তত ২৮ থেকে ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। প্রতিটি ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এখন এক বছর ধরে কোনো কাজকর্ম নেই।

তিনি আরও জানান, প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হলেও অর্থছাড় দেওয়া হয়নি। ফলে চার মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটির চারজন টেকনিশয়ানসহ ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

প্রতিষ্ঠানটির একটি কক্ষে সার প্রয়োগ যন্ত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন টেকনিশিয়ান ইয়াহিয়া মোল্লা। তিনি জানান, এটি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত সার প্রয়োগ যন্ত্র। এটি দিয়ে জমিতে সার প্রয়োগ করতে শতকরা ৪০ ভাগ সার সাশ্রয় হয়। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেবে কৃষি যন্ত্রপাতি টেস্টিং ও ট্রেনিং সেন্টার। প্রকল্প পরিচালকের নিজস্ব উদ্যোগে কিছু কিছু কাজ করা হচ্ছে।

ইয়াহিয়া মোল্লা আরও জানান, দেশে যত প্রকার কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবিত হবে বা বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা হবে, তা এ সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

যন্ত্রপাতি পরীক্ষাগারের কক্ষের দুই পাশে বেশ কিছু দামি চেয়ার পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা ছিল। এর কারণ জানতে চাইলে ইয়াহিয়া মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘একটি ভবন নির্মাণের কথা ছিল কিন্তু হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির আগের পরিচালক মো. সফিউল্লাহ ভবন নির্মাণের আগেই এগুলো কিনে রেখে গেছেন। তাই এগুলো ব্যবহার না হওয়ায় ঢেকে রাখা হয়েছে।’

কৃষি যন্ত্রপাতি টেস্টিং ও ট্রেনিং সেন্টারটি সরকারের রাজস্বখাতে নেওয়ার জন্য চেষ্টা বলছে বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান। যে কারণে চার মাস ধরে বেতন না পেলেও চাকরি সরকারিকরণের আশায় তারা এখনো প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েে গেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক হাবিবুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। খুব শিগগির আরও দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রকল্পটি চালু করার চেষ্টা চলছে। যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য যেন সফল হয়; সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।’

এসআর/এমএস