আমাদের সবার জীবনেই এমন কেউ না কেউ আছেন, যিনি কথায় কথায় রেগে গিয়ে চিৎকার করেন। পরিবারের সদস্য, অফিসের সহকর্মী বা রাস্তায় কোনো ছোট ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অনেককেই আমরা চেঁচিয়ে উঠতে দেখি। কখনও আমরা নিজেরাও এমন করি। অনেকে মনে করেন – এমন মানুষদের বোধহয় রাগ বেশি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘন ঘন চিৎকার বা উচ্চস্বরে প্রতিক্রিয়া শুধু রাগ নয়, বরং নিয়ন্ত্রণহীন মানসিক চাপ ও আবেগের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ।
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন –এর গবেষণায় দেখা গেছে, যখন আমরা রেগে যাই বা হতাশ হই, তখন শরীরে কোর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই রাসায়নিক পরিবর্তন শরীরকে ‘লড়াই বা পালাও’ (ফাইট অর ফ্লাইট) অবস্থায় নিয়ে যায়। ফলে কেউ কেউ ভয় বা দুঃখে চুপ করে যায়, আবার কেউ উচ্চস্বরে চিৎকার করে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
চিৎকার করা হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা স্বস্তি দেয়, কিন্তু এটি আসলে আবেগের বিস্ফোরণ—যার ফলে আশেপাশের মানুষ ভয় পায়, সম্পর্ক নষ্ট হয়, এবং পরে নিজেরও অপরাধবোধ হয়। নিয়মিত এমন আচরণ শরীরে স্থায়ীভাবে স্ট্রেস হরমোন বাড়ায়, যা দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগ, ঘুমের ব্যাঘাত ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তাই আজ (৬ নভেম্বর) বিশ্ব লেটস্ স্টপ শাউটিং দিবসে যেনে নিন কীভাবে চিৎকার করার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করবেন।
চিৎকার নিয়ন্ত্রণের উপায়১. রাগের মুহূর্তে থেমে যান: চেঁচানোর আগে ১০ সেকেন্ড সময় নিন। গভীর শ্বাস ফেলুন এবং নিজেকে পরিস্থিতির বাইরে এনে দেখার চেষ্টা করুন।২. কারণ খুঁজে বের করুন: আপনি আসলে কী নিয়ে রেগে যাচ্ছেন? কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা, না নিজের ক্লান্তি? বোঝা গেলে প্রতিক্রিয়া কমে যায়।
৩. শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন। এতে শরীরের অতিরিক্ত উত্তেজনা কমে।৪. ঘুম ও খাবারে মন দিন: ঘুমের অভাব বা রক্তে শর্করার ওঠানামাও আচরণে প্রভাব ফেলে।৫. রাগের পর ‘রিপেয়ার’ করুন: চিৎকার করলে পরে ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি ঠিক করার চেষ্টা করুন। এটি আত্মনিয়ন্ত্রণের চর্চা বাড়ায়।৬. পেশাদার সহায়তা নিন: যদি রাগ বা চিৎকারের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে কাউন্সেলরের সাহায্য নিন।
রাগ বা চিৎকার—দুটিই মানুষের প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু যখন তা প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন তা সম্পর্ক, কর্মজীবন ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তাই রাগকে দমন নয়, বরং বোঝা ও পরিচালনা করাই হলো সত্যিকারের অ্যাংগার ম্যানেজমেন্ট।
সূত্র: আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, মায়ো ক্লিনিক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ
এএমপি/জেআইএম