দেশজুড়ে

রিয়াজুল হান্নান-সালাউদ্দিন আইয়ুবীর মধ্যে লড়াইয়ের আভাস

কাপাসিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত গাজীপুর-৪ আসন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর জন্মভূমি কাপাসিয়া। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে হান্নান শাহর ছেলে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নানের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকলেও রিয়াজুল হান্নানের নাম ঘোষণার পরে মনোনয়নের বিপক্ষে প্রকাশ্যে কেউ বিরোধিতা করেননি।

ভোটাররা বলছেন, এই আসনে হান্নান শাহর পরিবার অত্যন্ত প্রভাবশালী। হান্নান শাহর মৃত্যুর পরে তার ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান বিএনপির হাল ধরেন। ভোটের মাঠে নেতাকর্মী-সমর্থকরা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। দলটির নেতাকর্মীদের আশা, বিএনপিকেই নির্বাচিত করবে জনগণ।

তবে জামায়াতের প্রার্থীকেও যথেষ্ট শক্তিশালী মনে করছেন ভোটাররা। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গাজীপুর মহানগর জামায়াতের ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য সালাউদ্দিন আইয়ুবী। তিনি এ আসনে বেশ পরিচিত। জামায়াত ও শিবিরের টিম নিয়মিত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ২৬ হাজার ৬৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬১ হাজার ৯৫১ জন। নারী ভোটার এক লাখ ৬৪ হাজার ৬৮০ জন।

অতীতে নির্বাচিত যারা

গাজীপুর-৪ আসনে ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম ভূঁইয়াকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের সিপিবির প্রার্থী মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এমএ মজিদকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ওবায়েদ উল্লাহ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ব্রিগেডিয়ার (অব.) আ স ম হান্নান শাহ আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিণী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা কাজীম উদ্দীন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচিত হন হান্নান শাহ। এরপর ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হান্নান শাহকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাজউদ্দীনের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দীন আহমদ।

২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নবীন প্রার্থী তাজউদ্দীনপুত্র তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী হান্নান শাহকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী শিল্পপতি এমএ মজিদকে পরাজিত করে ফের নির্বাচিত হন সোহেল তাজ।

আরও পড়ুন: ৪ ভাগে বিভক্ত বিএনপি, নির্ভার জামায়াতআসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি, বসে নেই জামায়াততৃতীয়বারের মতো বিএনপি জিতবে নাকি জামায়াতের অভিষেক?গয়েশ্বরের আসনে ফ্যাক্টর হতে পারে আওয়ামী লীগের ‘নীরব ভোট’তানিয়া রবের জন্য আসন ছেড়ে দিলে মানবেন না বিএনপির নিজান

সোহেল তাজ মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন পর তিনি প্রথমে মন্ত্রিত্ব ও পরে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১২ সালে উপনির্বাচনে সোহেল তাজের বড় বোন সিমিন হোসেন রিমি তারই চাচা অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দীন আহমদ খানকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। এরপরের তিনটি নির্বাচনেই জয়ী হন তিনি।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী শাহ রিয়াজুল হান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাপাসিয়া বিএনপির ঘাঁটি। জনগণ বিএনপির পক্ষে। দীর্ঘদিন জনগণ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেনি। জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আশা করছি, জনগণ এবার বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।’

আসনটিতে নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করেছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী সালাউদ্দিন আইয়ুবী। নিয়মিত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তিনি। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী বাহিনী তার পক্ষে চষে বেড়াচ্ছেন পুরো কাপাসিয়া এলাকা। বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন দলটির নারী কর্মীরা।

সালাউদ্দিন আইয়ুবী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখনো চাঁদাাবজি হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতি নিয়োগে বাণিজ্য হচ্ছে। মানুষ এসব থেকে মুক্তি চায়। মানুষ বুঝতে পারছে জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে দেশে দুর্নীতি-চাঁদাবাজি হবে না। মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার মানুষের কাছে যাচ্ছি। তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

এ আসনে মাওলানা কাজীম উদ্দীনকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনিও ভোটারদের টানতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। হাতপাখার পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা জনসংযোগ করছেন।

মাওলানা কাজীম উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জনগণ পরিবর্তনের পক্ষে। ইসলামি দল হিসেবে আমাদের পক্ষে ভোট দেবে বলে আশা করি। মানুষের যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি।’

ভোটারদের কথা

কাপাসিয়া বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী সুলাইমান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাজীপুর-৪ আসনটি মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। যে কারণে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’

পেশায় একজন বেসরকারি স্কুলশিক্ষক ফাতেমা বেগম বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেনি। এবার ভোট দেওয়ার সুযোগ হলে যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেবে কাপাসিয়ার মানুষ।’

কাপাসিয়ার তরগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা ফজলুর রহমান। তিনি বললেন, ‘এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। সে কারণে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে বিজয়ের মালা কে পরবে তা নির্বাচনের পরেই জানা যাবে।’

চাঁদপুর এলাকার মুদি দোকানদার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এই এলাকার মানুষ খুব ভেবেচিন্তে ভোট দেবে। তবে নির্বাচনে যারাই জয়ী হোক, এলাকার মানুষ শান্তি চায়।’

আমিনুল ইসলাম/এসআর/এমএমএআর/জেআইএম