দিল্লির লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের পাশে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের তদন্তে মঙ্গলবার সকালেও গোয়েন্দারা ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালাচ্ছেন। ওই বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে প্রশাসন। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ এবং তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা সেখানে রয়েছেন। ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন।
ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাতেই গিয়েছিলেন বিস্ফোরণস্থলে। তবে এখনো বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।
বিস্ফোরণ কীভাবে হলো?দিল্লির পুলিশ কমিশনার সতীশ গোলচা বিস্ফোরণের বিবরণ দিতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এই বিস্ফোরণের ফলে কাছাকাছি থাকা গাড়িগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র দিল্লি পুলিশ, ফরেন্সিক দল, সন্ত্রাস দমন এজেন্সি – এনআইএ এবং কমান্ডো বাহিনী – এনএসজির অফিসারেরা সেখানে গেছেন। বিস্ফোরণের তদন্ত চলছে, বিস্তারিত তথ্য দ্রুত জানানো হবে।
তবে গাড়ি বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাড়িতে কি আগে থেকেই বিস্ফোরক রাখা ছিল নাকি বোমা ছিল? গাড়ির জ্বালানি ট্যাংক বা সিএনজি ট্যাংকে কি বিস্ফোরণ ঘটলো, যার ফলে কাছাকাছি থাকা গাড়িগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হলো? গাড়ির যাত্রীরা কি আগে থেকেই জানতেন যে বিস্ফোরণ হবে?
এই বিষয়গুলো এখনো স্পষ্ট নয়।
সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে?পুলিশ প্রশাসন এখনো এটা স্পষ্ট করে বলেনি যে এটা কোনো হামলা কি না। তবে দিল্লির পুলিশ কমিশনার বলেছেন যে ঘটনার তদন্তে একাধিক এজেন্সি কাজে নেমেছে।
ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াহিদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার পরেই আমরা আরও তথ্য পাবো এবং কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো।
বিস্ফোরণ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নানা কথা লেখা হচ্ছে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে উদ্ধৃত করে এরকম দাবি করা হচ্ছে যে সিএনজি সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তবে পুলিশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।
তবে মঙ্গলবার সকালে উত্তর দিল্লি ডেপুটি পুলিশ কমিশনার রাজা বন্ধিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, দিল্লি বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্ত্রাসদমন আইন – ইউএপিএ, বিস্ফোরক আইন এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও ঘটনাস্থলে আছে। আমরা সবাই নমুনা জোগাড় করছি।
গাড়ির মালিক কে?ঘটনার তথ্য দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দিল্লির লাল কেল্লার কাছে সুভাষ মার্গ ট্র্যাফিক সিগন্যালে আই-২০ গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে কাছাকাছি থাকা বেশ কিছু গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই গাড়ি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে নানা ধরনের খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু স্পষ্ট তথ্য এখনো সামনে আসেনি।
গাড়ির মালিক কে? গাড়িটি কোথা থেকে আসছিল, কোথায় যাচ্ছিল? গাড়িতে কতজন যাত্রী ছিলেন, আর বিস্ফোরণে কতজনই বা মারা গেছেন? এসব তথ্য এখনো নেই।
তদন্তকারীরা গাড়িটির গতিপথ খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এরকম খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে বিস্ফোরণস্থলের কাছাকাছি এলাকাতেই আগের কয়েক ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করছিল গাড়িটি।
নানা সংবাদমাধ্যমে এটাও বলা হচ্ছে যে, গাড়িটি একটি পার্কিং এরিয়ায় দাঁড়িয়েছিল এবং বিস্ফোরণে কিছু আগেই ধীরে ধীরে এগোতে শুরু করে। যে জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটি লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের একেবারে গায়ে।
কিন্তু পুলিশ বা বিবিসি এসব তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি।
লক্ষ্যবস্তু কী ছিল?এই প্রশ্নও উঠছে যে বিস্ফোরণটি পরিকল্পনা করে ঘটানো হয়েছে, নাকি এটি দুর্ঘটনা?
যদি পরিকল্পনা হয়ে থাকে, তাহলে লক্ষ্যবস্তু কী বা কে ছিল? সাধারণ মানুষই কি লক্ষ্য ছিলেন? ঘটনার যোগসূত্র কি এলাকাতেই, নাকি তা কোনো রাজ্য বা কোনো দেশেও ছড়িয়ে আছে?
এসব প্রশ্নের জবাব এখনো পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বিবিসি বাংলাকেএএ/