আয়কর শুধুই বড় ব্যবসায়ী বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিষয় নয়। যে কেউ নির্দিষ্ট সীমার বেশি আয় করলে রাষ্ট্রকে কর দিতে হবে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, তাদের আয় করযোগ্য কি না।
চলুন সহজভাবে জেনে নিই, কীভাবে বুঝবেন আপনার করযোগ্য আয় আছে কি না।
প্রথম ধাপ: মোট আয় যোগ করুনপুরো বছরের সব উৎস থেকে আপনার মোট আয় হিসাব করুন। বেতন, ব্যবসার লাভ, বাড়ি ভাড়া, ব্যাংক সুদ, ফ্রিল্যান্স ইনকাম — সব কিছুই এর মধ্যে পড়বে। বাংলাদেশের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ‘দেশে অর্জিত বা অর্জিত বলে ধরা যায়’ এমন সব আয় করের আওতায় পড়ে।
দ্বিতীয় ধাপ: করমুক্ত অংশ বাদ দিনআইনে নির্দিষ্ট কিছু আয় করমুক্ত রাখা হয়েছে। যেমন—
>> কিছু নির্দিষ্ট ভাতা বা প্রভিডেন্ট ফান্ড অবদান>> সরকার ঘোষিত অনুদান>> কিছু পেনশন বা বিশেষ সুবিধাএই অংশগুলো মোট আয় থেকে বাদ দিলে যা থাকে, সেটিই আপনার করযোগ্য আয়।
তৃতীয় ধাপ: করমুক্ত আয়ের সীমা জানুনআপনার আয় যদি নির্দিষ্ট সীমার বেশি হয়, তাহলে সেটি করযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে।
>> সাধারণ করদাতাদের ক্ষেত্রে ২০২৪–২৫ অর্থবছর অনুযায়ী বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত তা করমুক্ত।
>> নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তির ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত
>> তৃতীয় লিঙ্গ বা প্রতিবন্ধী করদাতাদের ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত
>> গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত
>> প্রতিবন্ধী সন্তানের অভিভাবকদের প্রতি সন্তানের জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা আয় করমুক্ত
আপনার বার্ষিক আয় এসব সীমা অতিক্রম করলে আপনার আয় করযোগ্য বলে ধরা হবে।
চতুর্থ ধাপ: করহার ধাপে ধাপে প্রয়োগ করুনকরযোগ্য আয় নির্ধারণের পর ধাপে ধাপে করহার প্রয়োগ করতে হবে—
সাধারণ করদাতার প্রথম ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করমুক্ত।এর পরের ১ লাখ টাকায় ৫ শতাংশ কর।এর পরের ৪ লাখ টাকায় ১০ শতাংশ কর।এর পরের ৫ লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ কর।এর পরের ৫ লাখ টাকায় ২০ শতাংশ কর।এর বেশি আয়ে ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়।
পঞ্চম ধাপ: ছাড় বা রিবেট প্রযোজ্য কি না দেখুনযদি আপনি জীবনবিমা, পেনশন, সরকারি সঞ্চয়পত্র বা দান সংক্রান্ত খাতে বিনিয়োগ করেন, তাহলে নির্দিষ্ট শর্তে আয়কর ছাড় বা রিবেট পাবেন। এতে আপনার মোট করের পরিমাণ কমে যায়।
যেমন, ধরা যাক, এক ব্যক্তির বছরে আয় ৮ লাখ টাকা। প্রথম ৩.৫ লাখ করমুক্ত, বাকি ৪.৫ লাখের ওপর ধাপে ধাপে ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। হিসাব করে দেখা যায়, মোট কর দিতে হবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
কেন এই হিসাব জানা জরুরিনিজের আয় করযোগ্য কি না জানা থাকলে আয়কর রিটার্নে ভুল হয় না। ফলে জরিমানা বা তদন্তের ঝুঁকি কমে। সেই সঙ্গে আর্থিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ হয়।
সূত্র: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট সারসংক্ষেপ; ঢাকা কনসালটিং ট্যাক্স গাইড
এএমপি/এমএস