অর্থনীতি

থাকবে না মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড, প্রতিদিন প্রকাশ করতে হবে এনএভি

বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে মিউচুয়াল ফান্ডের নতুন বিধিমালা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০২৫’ নামের এই বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

নতুন বিধিমালা অনুযায়ী ভবিষ্যতে আর কোনো ক্লোজ এন্ড বা মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড অনুমোদন দেওয়া হবে না। এছাড়া বিদ্যমান মেয়াদি ফান্ডগুলো যদি বাজারদর ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেগুলোকে অবসায়নের পথে নিতে হবে।

বিধিমালা অনুযায়ী, বে-মেয়াদি ফান্ডের ইউনিট বিনিয়োগকারীরা যে কোনো সময় কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন। তবে ফান্ড পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) প্রকাশ করতে হবে। এতে ফান্ডের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন জানতে পারবেন—কোন ফান্ড লাভে, কোনটি লোকসানে।

বিধিমালায় বিদ্যমান মেয়াদি স্কিমের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ বিধান। ছয় মাসের মধ্যে কোনো ফান্ডের ইউনিটপ্রতি গড় লেনদেন মূল্য যদি নিট সম্পদ মূল্যের বা ক্রয়মূল্যের তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি কমে যায়, তাহলে ফান্ডের ট্রাস্টি বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করতে পারবে। সেখানে তিন-চতুর্থাংশ ভোটে সিদ্ধান্ত হলে বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে ফান্ডটি বেমেয়াদি বা অবসায়ন করা যাবে।

এই নতুন বিধিমালায় বিনিয়োগ ফান্ড পরিচালনাকারী অ্যাসেট ম্যানেজার, ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ানদের স্পষ্ট দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের সবাইকে বিএসইসির নিবন্ধন ও অনুমোদন নিতে হবে। বিধিমালাটির গেজেট প্রকাশিত হয়েছে ১২ নভেম্বর।

ফান্ড নিবন্ধন ও অনুমোদন

নতুন বিনিয়োগ ফান্ড চালু করতে হলে বিএসইসির অনুমোদন ও ট্রাস্ট ডিড রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। ফান্ডের আকার, মূলধন গঠন ও বিনিয়োগ কাঠামো আগেই কমিশনকে জানাতে হবে।

অ্যাসেট ম্যানেজার ও ট্রাস্টির ভূমিকা

ফান্ড পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে অ্যাসেট ম্যানেজার, আর বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় নজরদারির দায়িত্ব থাকবে ট্রাস্টির ওপর। ট্রাস্টিকে বিনিয়োগ ফান্ডের সব লেনদেন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

রিপোর্টিং ও নিরীক্ষা

সব বিনিয়োগ ফান্ডকে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন মান অনুযায়ী আর্থিক বিবরণী তৈরি করতে হবে। প্রতি বছর স্বাধীন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে অডিট করানো বাধ্যতামূলক।

তথ্য প্রকাশ ও বিনিয়োগকারীর অধিকার

ফান্ডের কার্যক্রম, আয়, ব্যয়, বিনিয়োগ ঝুঁকি ও মূল্যায়ন সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের কাছে মূল্য সংবেদশীল তথ্য গোপন রাখলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

নিয়ন্ত্রণ ও শাস্তি

বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় কমিশন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারবে। প্রয়োজনে ফান্ডের নিবন্ধন বাতিল বা কার্যক্রম স্থগিত করা যাবে।

বিদ্যমান মেয়াদি স্কিমের লভ্যাংশ

মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড উহার প্রত্যেক স্কিমের বার্ষিক হিসাব সমাপ্ত হবার পর উক্ত স্কিমের ইউনিট হোল্ডারদের মধ্যে এই বিধিমালার আলোকে ও ট্রাস্টির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রসপেক্টাস অথবা অফার ডকুমেন্টে বর্ণিত লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা বা শর্ত মোতাবেক সম্পদ ব্যবস্থাপক নগদ লভ্যাংশ বিতরণের ঘোষণা করবে, যার পরিমাণ প্রত্যেক বিদ্যমান মেয়াদি স্কিমের বার্ষিক নিট লাভের ৭০ শতাংশের কম হবে না।

বিনিয়োগের উদ্দেশ্য, ধরন ও খাত

মিউচুয়াল ফান্ড বা এর কোনো স্কিমের অধীন সংগৃহীত অর্থ কেবল স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ড এবং এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ, মূল বোর্ড এবং এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্তির জন্য ইস্যু করা সিকিউরিটিজের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের পুনঃগণপ্রস্তাব ও রাইট অফার’র উদ্দেশ্যে দেওয়া চাঁদা এবং সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে।

তবে শর্ত থাকে যে, স্টক এক্সচেঞ্জের কোনো বোর্ড বা প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত ডেট সিকিউরিটিজ বা শরিয়াহ ভিত্তিক সিকিউরিটিজ, যার ন্যূনতম ক্রেডিট রেটিং ‘এ’ এমন সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা যাবে।

বিধিমালা অনুযায়ী, কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত কোনো ফান্ডের ট্রাস্ট দলিল ও স্কিমের প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগের উদ্দেশ্য, খাত ও হার মোতাবেক উক্ত ফান্ড বা স্কিমের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ফিক্সড ইনকাম স্কিমের মোট সম্পদের (ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে) অন্তত শতকরা ৭৫ শতাংশ অর্থ ফিক্সড ইনকাম স্কিমে বিনিয়োগ করতে হবে।

কমিশন অনুমোদিত কোনো স্পেশাল পারপাস স্কিমের ধারণাপত্রে উল্লিখিত সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগের উদ্দেশ্য, খাত ও হার মোতাবেক উক্ত স্পেশাল পারপাস স্কিমের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত ফান্ডের সম্পদ বা অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজ ব্যতীত অন্য কোনো অ-তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে না- বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের মূলবোর্ড হতে তালিকাচ্যুত বা ওটিসি-তে লেনদেন করা কোনো সিকিউরিটিজ, এটিবি প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করা কোনো ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ বা কোনো অ-তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে, বিনিয়োগ পরবর্তী সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জের মূলবোর্ড তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিজ তালিকাচ্যুত হলে এবং ওটিসি বা এটিবি প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের জন্য স্থানান্তরিত হলে, ওই স্থানান্তর বা তালিকাচ্যুত হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগ প্রত্যাহার বা নগদায়ন করতে হবে।

এছাড়া বিনিয়োগ পরবর্তী সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জের কোনো বোর্ড বা প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত ডেট সিকিউরিটিজ বা শরিয়াহ ভিত্তিক সিকিউরিটিজ এর রেটিং যদি ‘এ’ এর নিচে নেমে যায়, উক্ত রেটিং পরিবর্তন হবার ৬ মাসের মধ্যে উক্ত বিনিয়োগ প্রত্যাহার বা নগদায়ন করতে হবে। স্কিমের অর্থ বিনিয়োগের ফলে সৃষ্ট পত্রকোষের বিবরণী সম্পর্কিত বিশদ প্রতিবেদন ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে, কমিশন কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত ছকে, কমিশনে দাখিল করতে হবে। এর আগে নিবন্ধিত সব বিদ্যমান মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা এর স্কিমের ক্ষেত্রে এই বিধিমালা সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হবার ৬ মাসের মধ্যে ওপরের বিধানগুলো পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

এমএএস/ইএ/এমএস