হঠাৎ বুক ধকধক করতে শুরু করা, হাত-পায়ের তালু ঘেমে ওঠা, হাত-পায়ে জোর না পাওয়া, আর মনে ভয় — এই লক্ষণগুলোর সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। কেউ বলেন প্যানিক অ্যাটাক, কেউ বলেন অ্যাংজাইটি অ্যাটাক। কোনটি সঠিক?
আধুনিক জীবনের দ্রুতগতির চাপের মধ্যে মানুষের মধ্যে এই ধরনের অনুভূতি দিন দিন বাড়ছে। যদিও প্যানিক ও অ্যাংজাইটি অ্যাটাক একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে প্রকৃতিতে এবং লক্ষণে তারা ভিন্ন।
প্যানিক অ্যাটাক বা হঠাৎ আতঙ্কের ঝাপটাপ্যানিক অ্যাটাক বা আতঙ্ক আক্রমণ আসে হঠাৎ, কয়েক মিনিটের মধ্যে তীব্র হয় এবং প্রায়ই কোনও বিশেষ কারণ ছাড়াই হয়। হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, মাথা ঘোরা, হাত-পায় কমজোরি — এই ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া এসময় দেখা যায়। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ (যুক্তরাষ্ট্র) জানায়, প্যানিক অ্যাটাকের সময় মস্তিষ্ক ‘ফাইট বা ফ্লাইট’ মোডে চলে যায়, যা শরীরকে বিপদের জন্য প্রস্তুত করে, যদিও বাস্তব কোনো বিপদ নেই।
অ্যাংজাইটি অ্যাটাক বা দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগঅ্যাংজাইটি অ্যাটাক বা উদ্বেগ আক্রমণ ধীরে ধীরে আসে। এটি সাধারণত দিনের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা বা দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে। এটার শারীরিক লক্ষণ তুলনামূলকভাবে কম তীব্র - হালকা ঘাম, দমবন্ধভাব, পেশীতে টান লাগা বা হালকা মাথা ঘোরা। সাধারণত চাকরি, পরীক্ষা, বা আর্থিক চাপ জাতীয় বাস্তবজীবনের সমস্যা এর সঙ্গে জড়িত।
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ) বলেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে উদ্বেগে থাকেন, তাদের মধ্যে অ্যাংজাইটি অ্যাটাক বেশি দেখা যায় এবং এটি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।
প্রতিকার ও নিয়ন্ত্রণপ্যানিক ও অ্যাংজাইটি অনেক দূর পর্যন্ত নিজে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যদি সঠিক উপায় জানা থাকে।
১. শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করুন: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন।২. ধ্যান ও যোগব্যায়াম: নিয়মিত ধ্যান মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে।৩. নিয়মিত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের চাপ কমায়।৪. মানসিক চাপ কমান: হালকা হাঁটা বা প্রিয় গান শোনার মতো কার্যক্রম উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।৫. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি অ্যাটাক নিয়মিত হয় বা দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা তৈরি করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্যানিক অ্যাটাক ও অ্যাংজাইটি অ্যাটাক — উভয়ই মানসিক চাপের প্রকাশ। তবে একটির প্রকৃতি হঠাৎ, তীব্র আতঙ্ক; অন্যটির প্রকৃতি ধীরে ধীরে, দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ। তাই পার্থক্য বোঝা এবং সঠিক নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস গড়া মানে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা।
সূত্র: ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ (যুক্তরাষ্ট্র), আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ), হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল
এএমপি/এমএস