ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের দেইর ইস্তিয়া গ্রামের ‘হাজ্জা হামিদা’ মসজিদে আগুন দিয়েছেন ইসরায়েলি দখলদাররা অর্থাৎ বসতি স্থাপনকারীরা। সেই সঙ্গে মসজিদের দেয়ালে লেখা হয়েছে ফিলিস্তিনবিরোধী বর্ণবাদী স্লোগান।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ভোরের দিকে দখলদাররা মসজিদটিতে আগুন ধরিয়ে দেন ইহুদী বসতী স্থাপনকারীরা। সেসময় পবিত্র কোরআনের একাধিক কপিও পুড়ে যায়।
ফিলিস্তিনের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, দখলদার ইসরায়েল মুসলিম ও খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থানের প্রতি যে ‘বর্বরতা’’ দেখাচ্ছে, এই ঘটনা তারই আরেক উদাহরণ এটি।
আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড়
মসজিদে অগ্নিসংযোগের এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উঠেছে তীব্র নিন্দার ঝড়। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক বলেন, এ ধরনের হামলা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। ইসরায়েলের দায়িত্ব, ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের সুরক্ষা দেওয়া ও এসব হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা।
জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বসতকারীদের হামলার বৃদ্ধিকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এ সহিংসতা ইসরায়েল সরকারের “চরমপন্থী নীতি ও উসকানিমূলক বক্তব্যের”ই ফল।
গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার জন্য সমালোচিত জার্মানিও বসতকারীদের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাম্প্রতিক অগ্নিসংযোগকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করে বলেছে, সহিংসতা ও অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ হওয়া জরুরি।
ফিলিস্তিনিরা অবশ্য শুধু নিন্দায় সন্তুষ্ট নয়; তারা বিশ্বশক্তিগুলোর প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষত তারা ফিলিস্তিনি অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি তুলেছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দক্ষিণ হেব্রনের বেইত উম্মার শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে দুই ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ওয়াফা। আবার গত সপ্তাহে রামাল্লার কাছে খিরবেত আবু ফালাহ গ্রামে একটি ফিলিস্তিনি পরিবারের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বসতকারীরা। বাড়িতে পরিবারের লোকজন থাকা অবস্থায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে সবাইকে দৌড়ে বের হতে হয়।
চলতি বছর পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতকারীদের হামলা রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে, বিশেষ করে জলপাই সংগ্রহ মৌসুম কেন্দ্র করে সহিংসতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা (ওসিএইচএ) জানায়, শুধু ১ অক্টোবরের পর থেকে জলপাই সংগ্রহ কেন্দ্র করে ১৬৭টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এসব হামলায় ১৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন ও ধ্বংস হয়েছে ৫ হাজার ৭০০টিরও বেশি জলপাই গাছ।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ চলমান থাকা অবস্থায় পশ্চিম তীরজুড়ে এ সহিংসতা আরও বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের চরম ডানপন্থি সরকার পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে দখল ঘোষণা (অ্যানেক্সেশন) করার চাপ বাড়াচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েল এরই মধ্যে পশ্চিম তীরে বাস্তবে দখল ও বর্ণবৈষম্য নীতির (এপারথাইড) মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জুলাইতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, বসত স্থাপনকারীদের সহিংসতা ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনীর প্রশ্রয় বা প্রত্যক্ষ সমর্থনেই সংঘটিত হচ্ছে। এসব হামলা দখলকৃত পশ্চিম তীর দখলে রাখা ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের বড় ও সমন্বিত কৌশলের অংশ।
সূত্র: আল-জাজিরা
এসএএইচ