ক্যাম্পাস

‘আদি নববর্ষ’ উদযাপনের ঘোষণা ডাকসুর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আদি নববর্ষের ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে চার পর্বের বিশেষ নবান্ন উৎসব আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কথা জানান ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, দেশজ সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম অনুষঙ্গ নববর্ষ উদযাপন একসময় ছিল পহেলা অগ্রহায়ণ। বাংলা পঞ্জিকার ১২ মাসের মধ্যে ১১টির নামকরণ নক্ষত্রভিত্তিক হলেও অগ্রহায়ণের নামের সঙ্গে রয়েছে বাংলার গভীর ইতিহাস, স্মৃতি ও বিস্মৃত নানা তথ্য। তিনি উল্লেখ করেন, প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে নববর্ষের উৎসব পালিত হতো এবং সেই আদি উৎসব ছিল ‘আমানি’ বা ‘নবান্ন’, যা অনুষ্ঠিত হতো পহেলা অগ্রহায়ণে। কৃষিনির্ভর এই উৎসবই ছিল বাংলার প্রকৃত নববর্ষ উদযাপন।

তিনি বলেন, সম্রাট আকবরের আমলে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে বৈশাখকে বছরের প্রথম মাস করা হলেও সাধারণ মানুষ পহেলা বৈশাখকে নববর্ষ হিসেবে উদযাপন করতো না। উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপনের প্রচলন শুরু করেন এবং শান্তিনিকেতনে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৬৭ সালে বর্তমান বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো পহেলা বৈশাখ উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলে এই উৎসবের বিরোধিতা হওয়ায় তা বাঙালির সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের একটি প্রতীক হিসেবে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, বর্তমান প্রজন্মের সামনে আদি নববর্ষ ও পহেলা অগ্রহায়ণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরতেই এবার নবান্ন উৎসবকে আদি নববর্ষ উৎসব হিসেবে উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উৎসবে চারটি পর্ব থাকবে। প্রথম পর্ব ‘রঙতুলিতে নবান্ন’- এতে দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী ও চারুকলার সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা জুলাই ও নবান্ন থিমে আঁকবেন ছবি। মোট ১৫ জন শিল্পী এই আঁকায় অংশ নেবেন এবং পর্বটি শুরু হবে সকাল ১০টায়।

দ্বিতীয় পর্ব ‘আদি নববর্ষ আনন্দযাত্রা’কে উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। চারুকলার সহযোগিতায় আনন্দযাত্রার জন্য তিনটি বিশেষ মোটিফ তৈরি করা হচ্ছে-একটি জুলাই থিমে, একটি জেলে জীবনের প্রতিচ্ছবি এবং অন্যটি কৃষিজীবনকে কেন্দ্র করে। পাশাপাশি উপস্থাপিত হবে গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন উপাদান।

তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অতিথিদের শুভেচ্ছা বিনিময়। বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সংগঠন আবৃত্তি, নাচ, গান ও জাদু পরিবেশন করবে। পরে দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকছে সঙ্গীত ও পালাগান। অনুষ্ঠান চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।

এফএআর/এসএনআর/এমএস