খেলাধুলা

কঠিন সময়েই বোঝা যায় কারা সত্যিকারের আপন: বাবর আজম

দীর্ঘ ৮০৭ দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে বাবর আজমের গতকাল (১৪ নভেম্বর) রাতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েছেন সিরিজও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের বিশতম শতক হাঁকিয়ে তিনি এখন সাঈদ আনোয়ারের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক পাকিস্তানের ওয়ানডে ক্রিকেটে।

কাঙ্ক্ষিত সেই শতকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেই জানালেন ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। সিরিজ জিতিয়ে বাবর বলেন, ‘আমি যেখানেই গিয়েছি, ভক্তদের সমর্থন পেয়েছি। শুধুমাত্র ইসলামাবাদে নয়, সব জায়গায় যেমন সমর্থন পেয়েছি। সেটা অসাধারণ। সমগ্র পাকিস্তানে সমর্থকরা আমাকে সমর্থন দিয়েছে এবং এতে আমাকে বিশাল অনুপ্রেরণা দিয়েছে। কঠিন সময়ে তারা কখনও আমাকে ছেড়ে যায়নি। কঠিন সময়েই বোঝা যায়, কারা সত্যিকারের আপনজন।’

ওপেনাররা ভালো শুরু এনে দেওয়ায় বাবরের কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। আগের বেশ কয়েকটি সিরিজে ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারছিলেন না তিনি। এই ম্যাচে নিজের ব্যাটিংয়ে ভালো সাপোর্ট পেয়েছেন সতীর্থদের কাছে থেকেও।

সে ব্যাপারে বাবর বলেন, ‘আগের সিরিজগুলোতে আমি শুরু পেয়েছিলাম, কিন্তু বড় রানে রূপ দিতে পারিনি। ইনিংস শুরু হওয়ার পর আমাদের পরিকল্পনা ছিল জুটি গড়া। ফখর আর আমি যখন ব্যাট করছিলাম, আমি তাকে যতটা সম্ভব স্ট্রাইক দিচ্ছিলাম, কারণ সে এমন ব্যাটার যে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। সে যতক্ষণ উইকেটে থাকবে, প্রতিপক্ষ ততই চাপে থাকবে।’

ওপেনিংয়ে নামা ফখরের ৭৮ রানের ইনিংসে বাবরের সেঞ্চুরি ও পাকিস্তানের জয়ে রাখে অসামান্য অবদান। একইভাবে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৫১ রানের ইনিংসও রাখে সহায়ক ভূমিকা। বাবর যখন এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে, তখন পুরো গ্যালারিতেই ছিল উত্তেজনার রেশ। কিছুটা নার্ভাস ছিলেন বাবর নিজেও। তবে সেটি কমেছে রিজওয়ানের আত্মবিশ্বাসী ইনিংসে।

দল তখন জয় থেকে ৫ রান দূরে আর বাবরের সেঞ্চুরি করতে দরকার ছিল কেবল ১ রান। প্রমোদ মাদুশানের বল মিডউইকেটে পুল করে ১ রান নিয়ে অবসান ঘটান ৮৩ ইনিংস ও ৮০৭ দিনের অপেক্ষার। দেখা পান পরম আরাধ্য সেই সেঞ্চুরির। বাবর নিজে ছিলেন শান্ত, অনুভূতি যেন ধীরে ধীরে তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ নিরাবেগ দাঁড়িয়ে থেকে তিনি হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করেন।

সেঞ্চুরির খরা কাটিয়ে ওঠার আগের সময়টা যে বাবরের জন্য কঠিন ছিল সেটি তো অনুমেয়ই। বাবর নিজেও স্বীকার করলেন সময়টা কঠিন ছিল, তবে তিনি ঘাটতি রাখনেনি কোনো পরিশ্রমের, ‘সময়টা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু আমি নিজের ওপর ভরসা করেছি। ফিটনেসসহ যেখানে উন্নতির প্রয়োজন ছিল তা নিয়ে কাজ করেছি। শেষ পর্যন্ত সবই বিশ্বাসের ব্যাপার। জীবনে এসব চলতেই থাকবে, আর আপনি নেতিবাচক চিন্তার ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন, ভাবতে পারেন কেন সব আমার সঙ্গেই হচ্ছে। কিন্তু আপনাকে নিজের পরিকল্পনায় অটল থাকতে হবে এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে একসময় আপনি পরিশ্রমের ফল পাবেন।’

সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি স্মরণ করেছেন নিজের দুই কোচ শহিদ আসলাম ও মনসুর রানাকেও। তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই দুজন সেই মানুষ, যারা শৈশব থেকেই আমার সঙ্গে আছে, এবং আমার কী প্রয়োজন তা তারা পুরোপুরি জানে। সময়টা সহজ ছিল না, তাই আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনার নিজের ওপর ভরসা রাখতে হবে। মানুষ, কোচ-সবাই কেবল আপনাকে পরামর্শ দিতে পারে। কাজটা আপনাকেই করে দেখাতে হয়। তাই আত্মবিশ্বাসই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

বাবরের সেঞ্চুরি খরা কাটানোর দিনটা নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য স্মরণীয়। পুরো পাকিস্তান অপেক্ষায় ছিল তার সেঞ্চুরি ও স্বরূপে ফেরার। অভিষেকের পর থেকেই তার ওপর যে প্রত্যাশার চাপ জন্মেছে, তা তো সহজে মেটার নয়। ৮০৭ দিন পর সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জিতিয়েছেন সিরিজ। সমর্থকদের আশা, আগামীকাল (১৬ নভেম্বর) রাওয়ালপিন্ডিগতে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে বাবরের আরও একটি জাদুকরি ইনিংসের সাক্ষী হওয়া।

আইএন/এমএমআর/জেআইএম