আন্তর্জাতিক

পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজনীতি ছাড়লেন লালু প্রসাদের মেয়ে

ভারতের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডির ভরাডুবির পরদিনই পরিবার ত্যাগ ও রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিলেন দলীয় প্রধান লালু প্রসাদ যাদবের মেয়ে রোহিনী আচার্য। শনিবার (১৫ নভেম্বর) এক রহস্যময় পোস্টে এই ‘বিস্ফোরক’ সিদ্ধান্তের কথা জানান রোহিনি।

এক্সে (সাবেক টুইটার) রোহিনী লেখেন, আমি রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছি। আমার (যাদব) পরিবারকেও ত্যাগ করছি। সঞ্জয় যাদব ও রামিজ আমাকে এটাই করতে বলেছিলেন। সব দায় আমি মাথা পেতে নিচ্ছি।

I’m quitting politics and I’m disowning my family … This is what Sanjay Yadav and Rameez had asked me to do …nd I’m taking all the blame’s

— Rohini Acharya (@RohiniAcharya2) November 15, 2025

রোহিনীর পোস্ট বিহারের রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দেয়। আর পরিবার ও রাজনীতি থেকে দূরে যাওয়ার নেপথ্যে সঞ্জয় যাদব ও রামিজ নুমান খান নামে দুই ব্যক্তির কথা জানান রোহিনী। জানা গেছে, সঞ্জয় ও রামিজ দুজনেই লালু প্রসাদের ছোট ছেলে তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, রোহিনীর এমন সিদ্ধান্তের পেছনে তেজস্বী জড়িত।

শনিবার রাতে পাটনা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরাসরি তেজস্বীর নাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোহিনী। তার স্পষ্ট জবাব, আমার কোনো পরিবার নেই। আপনাদের তেজস্বী যাদব, সঞ্জয় যাদব ও রামিজকে জিজ্ঞেস করা উচিত। তারাই আমাকে পরিবার থেকে তাড়িয়েছেন।

রোহিনীর ভাষ্য, ওরা কোনো দায়িত্ব নিতে চান না। সবাই জিজ্ঞেস করছে, আরজেডি কেন এভাবে ধরাশায়ী হলো? অথচ সঞ্জয় বা রামিজকে নিয়ে প্রশ্ন তুললেই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এমনকি, অপমান করা হয় ও জুতা দিয়ে মারাও হয়।

এদিকে, রোহিনীর এই পোস্টের কারণে পরিবারে ও দলে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর আগে, লালুর বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদবকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি নিজেই ‘জনশক্তি জনতা দল’ নামে একটি দল গঠন করেন, যারা একাই নির্বাচন করে ও রাঘোপুরে তেজস্বীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়। তবে দলটি একটি আসনও জিততে পারেনি, এমনকি তেজ প্রতাপও মাহুয়া থেকে হেরে যান।

বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি ২৪৩ সদস্যের বিধানসভায় মাত্র ২৫টি আসন পায়। মহাগঠবন্ধন জোট মিলে পায় মাত্র ৩৫ আসন। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জিতে নেয় ২০২টি আসন।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএএইচ

// জানা যায়, সঞ্জয় ও রামিজ- দুজনেই লালু প্রসাদের ছেলে অর্থাৎ রোহিনির ভাই তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ। সেই হিসেবে, লালুকন্যার এই সিদ্ধান্তের পেছনে তার ভাই রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এখানে রামিজ বলতে রামিজ নুমান খানকে বোঝানো হয়েছে। তিনি তেজস্বী যাদবের ঘনিষ্ঠ ও দলের মূল টিমের সদস্য। উত্তর প্রদেশের এই রামিজ সাবেক এক এমপির ছেলে ও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

পোস্টের পর সাংবাদিকরা রোহিনির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেজস্বীর সহযোগীদের নিয়ে প্রশ্ন তুললেই পরিবারের বাইরে চলে যেতে হয়। তার ভাষ্য, আমার আর কোনো পরিবার নেই। সঞ্জয়, রামিজ আর তেজস্বী যাদবকেই জিজ্ঞেস করুন। তারা আমাকে পরিবার থেকে বের করে দিয়েছে, কারণ তারা দায়িত্ব নিতে চায় না। আর দল এমন অবস্থায় কীভাবে পৌঁছালো, তা তাদেরকেই জিজ্ঞেস করা উচিত।

তিনি অভিযোগ করেন, সঞ্জয় আর রামিজের নাম নিলেই যে কাউকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়, অপমান করা হয়। এমনকি, স্যান্ডেল দিয়ে মারাও হয়।

রোহিনির এই পোস্টের কারণে পরিবার ও দলে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর আগে লালুর বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদবকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি ‘জনশক্তি জনতা দল’ গঠন করেন, যারা একাই নির্বাচন করে ও রাঘোপুরে তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়। তবে দলটি একটি আসনও জিততে পারেনি।

বলা হচ্ছিল, তেজ প্রতাপের বহিষ্কারে রোহিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন। নির্বাচনের আগেও তিনি দল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তবে কিছু সময় পরে ফের সমর্থনমূলক পোস্ট দেন।

সেপ্টেম্বরে তিনি সব রাজনৈতিক নেতা ও পরিবারের সদস্যদের ‘আনফলো’ করে জানান, তার নামে অপপ্রচার চলছে। এক পোস্টে তিনি লেখেন, যারা মিথ্যা অভিযোগ করছে, তাদের চ্যালেঞ্জ করছি। যদি প্রমাণ করতে পারে যে আমি কখনো কারও জন্য অনুরোধ করেছি বা বাবাকে কিডনি দান করার বিষয়টি মিথ্যা, তাহলে আমি রাজনীতি ও প্রকাশ্যে আসা ছেড়ে দেব। তিনি আরও লেখেন, প্রমাণ করতে না পারলে সংশ্লিষ্টদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

তবে ৯ নভেম্বর তিনি তেজস্বীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানান ও তার নেতৃত্বকে প্রশংসা করেন। পোস্টে রোহিনি লেখেন, বয়সে তরুণ, কিন্তু হৃদয়ে সত্যবাদী। আমাদের পরিশ্রমী ভাই তেজস্বী বিহারের স্বপ্ন পূরণের কারিগর হোক।

এদিকে, নির্বাচনে আরজেডি ২৪৩ সদস্যের বিধানসভায় মাত্র ২৫টি আসন পায়। আর তাদের জোট পায় মাত্র ৩৫ আসন। অন্যদিকে, মোদীর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জিতে নেয় ২০২টি আসন।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএএইচ

// ]]>