আইন-আদালত

৫৭ ধারায় তদন্তাধীন মামলা বাতিলের পথ খুললো

আগের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার তদন্তাধীন থাকা মামলায় আসামি খালাস পাওয়ার ক্ষেত্রে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই রায়ের ফলে অধস্তন আদালতে ৫৭ ধারায় হওয়া যেসব মামলা দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন রয়েছে, সেসব মামলা অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই বাতিলের পথ উন্মুক্ত হলো।

অযৌক্তিকভাবে মামলা করার পর দীর্ঘদিনেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মামলাটি বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি এ মামলার রায় প্রকাশ করেন আদালত।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বনাম রাষ্ট্র মামলায় ২০১৮ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় অধস্তন আদালতে তদন্তাধীন মামলাটি বাতিল করে গত ৭ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে শহিদুল আলমের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আব্দুল্লাহ আল নোমান, মনিরা হক মনি, প্রিয়া আহসান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবি, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজা আউয়াল ও আসিফ ইমরান।

আরও পড়ুনআলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মামলা বাতিলবাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে মাটিতে ছুড়ে ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী: শহিদুল আলমছবিমেলা ফেলোশিপের আবেদন গ্রহণ চলছে

এই রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, মামলা বাতিলে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করা হলো। পাশাপাশি সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭ ধারায় দায়ের করা (বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ৬১ (১) ও (২) ধারা) মামলাটি অধস্তন আদালতে তদন্তাধীন পর্যায়ে (অর্থাৎ মামলা দায়েরের পর এখনও অভিযোগপত্র দাখিল হয়নি) চলমান থাকা মামলাটি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দেওয়া হলো।

রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, এই মামলার এফআইআর-এ ক্রটি পরিলক্ষিত হয়েছে এবং মামলাটি দায়েরের দীর্ঘদিন পরেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট অধস্তন আদালতে তদন্তাধীন থাকা মামলাটি বাতিল করে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালতের এমন পর্যবেক্ষণের কারণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় (বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ৬১ ধারায় প্রতিস্থাপিত হয়েছে) দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন থাকা মামলাসমূহ চলতে পারবে না। এই পর্যবেক্ষণের উদাহরণ প্রয়োগ করে অধস্তন আদালতে ৫৭ ধারায় তদন্তাধীন পর্যায়ে থাকা মামলাসমূহ থেকে আসামিরা খালাস পাওয়ার সুযোগ পাবেন।

মামলার বিষয়বস্তু ও প্রেক্ষাপট

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট রমনা থানায় শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলাটি করা হয়। আগের দিন তাকে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে তুলে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগ তুলে করা ওই মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। মামলায় ১০৭ দিন কারাভোগের পর একই বছরের ২০ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি।

২০১৮ সালের অক্টোবরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়। এ অবস্থায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে থাকা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ওই মামলার তদন্ত কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ রিট আবেদন করেন শহিদুল আলম।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট একই বছরের ১৫ মার্চ রুল দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থগিত করে।

২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট শহিদুলের করা রিট আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন তিনি। এই লিভ টু আপিল খারিজ করে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

ওই মামলার এফআইআর ও তদন্ত কার্যক্রম বাতিল চেয়ে গত বছরের আগস্টে হাইকোর্টে আবেদন করেন শহিদুল আলম।

শুনানি নিয়ে গত বছরের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করে। চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ৭ আগস্ট রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট।

শহিদুল আলমের আইনজীবীদের যুক্তি ছিল—২০১৮ সালের আগস্টে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলাটি হয়। ওই বছরের অক্টোবরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। নতুন আইন অনুসারে আগের আইনের ৫৭ ধারায় করা যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি, সাইবার ট্রাইব্যুনালে সূচিত/গৃহীত হয়নি বা বিচারাধীন নয়—সেসব মামলা চলতে পারে না।

এফএইচ/এসএইচএস/জেআইএম