ডিআরইউ-নগদ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গণমাধ্যম হলো জনগণের কণ্ঠ ও অনুভূতির প্রতিফলন। তাই সাংবাদিকতার দায়িত্ব অত্যন্ত বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আজ যারা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের আন্তরিক অভিনন্দন। তবে যারা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, তারাও অত্যন্ত মূল্যবান কাজ করেছেন। অনেক মানসম্মত প্রতিবেদন পুরস্কারের বাইরে থেকেও প্রশংসার দাবি রাখে।
রোববার (১৬ নভেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ডিআরইউ-নগদ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিপোর্ট মূল্যায়নের কঠিন দিক তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এই রিপোর্টগুলো বিচার করা খুব কঠিন। মান, প্রেক্ষাপট, ভাষা—সবকিছু যাচাই করতে হয়। যারা এই কষ্টসাধ্য কাজটি করেছেন, তাদের প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ।
সাংবাদিকতা রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ—তা উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং সমাজের গভীর সত্যগুলো তুলে ধরে। সমালোচনা অবশ্যই করবেন, ভুল ধরিয়ে দেবেন, তবে ভালো কাজের কথাও বলবেন।
তিনি জানান, অনেক সময় সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়। গতকাল এক সমস্যার তথ্য পাই, সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সচিবকে পাঠাই। আজই তিনি আপডেট দেবেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরায় সাংবাদিকদের ভূমিকা আরও বাড়বে। মানুষকে তথ্য দেওয়া, মোটিভেট করা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা সাংবাদিকদের বড় দায়িত্ব।
অর্থনীতি ধ্বংস হয়নি, বরং ঘুরে দাঁড়াচ্ছেঅর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগস্টের কঠিন সময় থেকে এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। রিজার্ভ, রপ্তানি—সব ক্ষেত্রেই উন্নতি হচ্ছে। অর্থনীতি একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়নি; বরং আগের তুলনায় ভালো অবস্থায় আছে। তিনি ‘মেগা প্রজেক্ট’ প্রসঙ্গে বলেন, অনেক প্রকল্প মনুমেন্ট হয়ে গেছে, যেখানে ব্যয় হয়েছে শত শত কোটি টাকা, কিন্তু বাস্তব সুফল কম। এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে আরও জবাবদিহি ও সংযমী হতে হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণাই বেশি। বাইরে গিয়ে দেখি, বড় বড় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের কাজকে স্বীকৃতি দেয়। সমস্যা আছে ঠিকই, তবে অগ্রগতি তারা স্বীকার করে।
আগামী সরকারের জন্য সুসংহত কাঠামো রেখে যেতে চান
আগামী কয়েক মাসকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দায়িত্ব এখন কাঠামোগুলো সুসমন্বিত করে আগামী সরকারের হাতে তুলে দেওয়া। যেন তারা এগুলো আরও আধুনিক ও কার্যকরভাবে এগিয়ে নিতে পারে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার দিকেও জোরউন্নয়ন শুধু অর্থনীতিতে সীমাবদ্ধ নয় উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মানুষ শুধু ভাত-রুটি দিয়ে বাঁচে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা—এসবই সার্বিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশকে আরও সুখী ও উন্নত করতে এগুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে।
বক্তব্যের শেষাংশে তিনি সাংবাদিকদের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে বলেন, আপনারা সমালোচনা করবেন, সন্দেহ করবেন—এটাই স্বাভাবিক। তবে পুরো চিত্রটি দেখলে বুঝবেন, আমরা এগোচ্ছি। আগামীতে আরও দ্রুত এগোবে বাংলাদেশ।
ইএআর/এমএমকে/এমএস