দেশজুড়ে

কুষ্টিয়ায় উচ্ছেদের ৭ দিনের মাথায় ফের দোকান নির্মাণ

কুষ্টিয়া শহরের ব্যস্ততম সড়ক কলেজ মোড় এলাকায় দিনরাত যানজট লেগে থাকে। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, জেলার সবচেয়ে বৃহৎ বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে এ সড়কে। এছাড়াও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, জেলা কারাগার, ডিসি কোর্ট, জজ কোর্ট, সরকারি মহিলা কলেজ, পলিটেকনিক কলেজে যাতায়াতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক ব্যবহার করতে হয়।

সড়কের ওপর ওষুধের দোকানসহ অবৈধভাবে একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। তাই পথচারীসহ সর্বসাধারণের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল অবৈধ দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যেন উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু বিগত সময় রাজনৈতিক কারণে কুষ্টিয়া পৌরসভা বারবার নোটিশ প্রদান করেও এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

এ অবস্থায় সর্বসাধারণের দাবির প্রেক্ষিতে ২২ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কলেজ মোড় এলাকায় সড়কের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা ২১টি অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করে। দীর্ঘ কয়েক যুগ পর কলেজ মোড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের এ অভিযানকে কুষ্টিয়াবাসী সাধুবাদ জানায়।

কিন্তু উচ্ছেদ করার মাত্র সাতদিন যেতে না যেতে পৌর কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের নাকের ডগায় উচ্ছেদ করা সরকারি ওই জায়গায় পুনরায় ২১টি দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। উচ্ছেদ হওয়া ওই জায়গায় পুনরায় দোকান ঘর নির্মাণ শুরু হওয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ পৌর কর্তৃপক্ষের তথাকথিত ‘মৌখিক অনুমতি’ নিয়ে দখলদাররা সেখানে আবারও দোকান নির্মাণ শুরু হয়েছে। তাদের অভিযোগ পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে পুনরায় দোকান নির্মাণ করার মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমতির নেপথ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকা লেনদেনের জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান বলেন, অভিযানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেতৃত্ব দেন। উচ্ছেদ অভিযান শেষে প্রায় ১০–১৫ ফুট জায়গা দখলমুক্ত করা হয়। আমার জানা মতে, সেখানে নতুন করে কোনো মার্কেট নির্মাণের অনুমতি প্রদান করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া পৌরসভার লাইসেন্স শাখার এক কর্মকর্তা জানান, আমরা এ শাখা থেকে পুনরায় তাদেরকে পুনরায় দোকান নির্মাণের কোন অনুমতি প্রদান করিনি। তবে তারা কার অনুমতি নিয়ে পুনরায় দোকান নির্মাণ করছে এ বিষয়ে আমাদের কোনো কিছু জানা নেই।

এদিকে পুনরায় দোকান নির্মাণের প্রতিবাদে কুষ্টিয়া পৌর নাগরিক অধিকার পরিষদ ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) দুই দফা মানববন্ধন করে দোকান নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে ফের দোকান নির্মাণ শুরু করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। বক্তারা সরকারি জায়গা অবৈধভাবে বরাদ্দের নামে প্রায় ৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন।

কুষ্টিয়া পৌর নাগরিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামিম উল হাসান আপু বলেন, কুষ্টিয়াবাসী দীর্ঘদিন ধরে যানজটে অতিষ্ঠ। রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য উচ্ছেদ অভিযানকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু যদি আবার দোকান নির্মাণ করা হয় তাহলে এ উচ্ছেদের মানেটা কী? এটা জনস্বার্থ নয়, অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল।

কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মিজানুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা ওখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ১০ ফিট রাস্তা উদ্ধার করেছে। এরপর যা ঘটেছে সেটা কোনোটা অফিসিয়াল না। ১৯৮৪-৮৫ সালের দিকে দোকানদারদের পৌরসভা থেকে একটা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার সদ্য বদলির আদেশপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, তাদের রাস্তার জায়গা ছেড়ে দিয়ে পেছনে চলে যেতে বলা হয়েছে। এর বাইরে কী হচ্ছে এটা আমার জানা নেই।

আল-মামুন সাগর/আরএইচ/এমএস