দেশের সরকারি সব ভবনকে ‘গ্রিন বিল্ডিং’ হিসেবে নির্মাণ ও রূপান্তর করতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এ বিষয়ে এখনই সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন উল্লেখ করে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে এক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ গ্রিন বিল্ডিং ম্যানুয়াল প্রণয়নের নির্দেশ দেন তিনি।
রোববার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর গণপূর্ত ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, গ্রিন প্রকিউরমেন্ট এবং গ্রিন বিল্ডিং’ শীর্ষক সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, কোনো মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর গ্রিন বিল্ডিংয়ের বাইরে গেলে চলবে না। বাধ্যতামূলক নীতি থাকলে কম পানি ব্যবহার, পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো ও আধুনিক পরিবেশবান্ধব নির্মাণশৈলী নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, দেশের নির্মাণশিল্পকে আধুনিকায়ন করতে হলে সরকারি নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। লেকগুলো ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য নয়, এগুলো মানুষের জন্য—সুতরাং প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়নের নামে বাণিজ্যিক কার্যক্রম করা চলবে না। পাশাপাশি কমিউনিটি ও সরকারের দায়িত্বের সীমানা স্পষ্ট করাও জরুরি।
ইটভাটা প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটার আগুন ও ধোঁয়া দেশের সবুজায়ন নষ্ট করছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তবে ইটের বিকল্প প্রযুক্তি ও উপকরণ প্রচার না করলে শুধু আইন প্রয়োগে সমস্যার সমাধান হবে না।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ইটভাটা ভাঙা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়; ব্লক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আরোপ করাই টেকসই পথ।
তিনি রাজউককে ভবন নির্মাণে নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারই ইটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। সুতরাং বিকল্প উপকরণের প্রচার ও ব্যবহারে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেমিনারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, আদালত ও এতিমখানার ভবনের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়। সেগুলোকে পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক কাঠামোয় সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করতে হবে।
তিনি শহরের জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানান এবং সব সরকারি ভবনকে পরিবেশের সহায়ক হিসেবে পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম, রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম, প্রধান স্থপতি আসিফুর রহমান ভূঁইয়া এবং নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনায় আরও অংশ নেন- ইঞ্জিনিয়ার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ (অব.), ইঞ্জিনিয়ার আশেক আহমেদ শিবলী ও ইঞ্জিনিয়ার শাহ ইয়ামিন-উল-ইসলাম। এতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররাও উপস্থিত ছিলেন।
আরএএস/এমকেআর/জিকেএস