তার অধিনায়কত্বেই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল মুশফিকুর রহিমের। ২০০৫ সালের ২৬ মার্চ ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মূলতঃ ব্যাটার হিসেবে টেস্ট ক্যাপ পান মুশফিকুর রহিম। তখন বাংলাদেশ দলের টেস্ট ক্যাপ্টেন ছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন।
আবার ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে মুশফিক যখন প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে যান, ভারতের সাথে ২০০৭ সালের ২০ মার্চ যখন প্রথম বিশ্বকাপ অভিষেক ঘটে, তখনো টিম বাংলাদেশের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার।
সেখানেই শেষ নয়, অভিষেক টেস্টের পর ৯ মাস বিরতিতে (২০০৫ সালের মে থেকে ২০০৬ সালের মার্চ) মুশফিক যখন দ্বিতীয়বার টেস্ট সিরিজ খেলতে মাঠে নামেন (২০০৬ সালের মার্চে, বগুড়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে), সেই মিশনেও নেতৃত্বে ছিলেন হাবিবুল বাশার।
এরপর হাবিবুল বাশার খেলা ছেড়ে নির্বাচক হয়ে যান। নির্বাচক হিসেবে অধিনায়ক ও ক্রিকেটার মুশফিককে পেয়েছেন বেশ কয়েক বছর। কাজেই মুশফিকুর রহিমের টেস্ট জীবন শুরু থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্রিকেটার, অধিনায়ক মুশফিকের পথচলা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ ছিল হাবিবুল বাশার সুমনের।
সেই ২০০৫ সালের ইংল্যান্ড সফরে সদ্য কৈশোর পার করা ১৭ বছরের মুশফিককে প্রথম সহযোগী ক্রিকেটার হিসেবে দেখা। আর সবশেষ নির্বাচক পদে থেকে মুশফিকের সাথে মাঠে, ড্রেসিং রুমে, নানা সিরিজ, টুর্নামেন্ট ও সফরের স্মৃতি, সব মিলিয়ে দীর্ঘ ২০ বছরের পথ চলা।
সেই আলোকে হাবিবুল বাশারই হচ্ছেন একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যার পক্ষে ক্রিকেটার, অধিনায়ক ও ক্রিকেট ‘পার্সোনালিটি’ মুশফিকের সবচেয়ে ভাল মূল্যায়ন করার কথা। আজ রোববার জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে সেই মূল্যায়নই করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, নির্বাচক ও বর্তমানে বিসিবি গেম ডেভোলপমেন্ট প্রধান হাবিবুল বাশার সুমন।
আসুন তার মুখ থেকেই শোনা যাক, আজ থেকে ২০ বছর আগে ইংল্যান্ড সফরে প্রথম দেখা মুশফিকুর রহিমকে। তারপর মুশফিকের বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা, সাফল্যের নানা মাইলফলক স্পর্শ করা, সবই নিজ চোখে দেখেছেন হাবিবুল বাশার।
মুশফিককে প্রথম দেখার স্মৃতি আওড়াতে গিয়ে হাবিবুল বাশার সুমনের ব্যাখ্যা, ‘প্রথম দেখায় মুশফিককে দেখে আমি সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। বেবি ফেস, মানে শিশুসুলভ চেহারা। ছোট-খাট গড়ন। দেখে মনে হয়েছিল, এই ছেলে টেস্ট খেলবে! দীর্ঘদেহী ইংলিশ ফাস্ট বোলারদের বল খেলতে গিয়ে তো উড়ে যাবে সে। প্রথম দেখার প্রথম অনুভুতি এমনই। বাট ক’দিনেই বুঝে ফেললাম, দেখতে নিষ্পাপ, শিশুসুলভ আর গড়নে ছোট-খাট দেখালেও, মুশফিক ভিতরে অনেক শক্ত-সমর্থ। মেন্টালি অনেক স্ট্রং।’
‘ইংল্যান্ড ট্যুরটা বেশ টাফ ছিল। কারণ, আমরা যে কন্ডিশনে খেলি ও আমাদের ক্রিকেট চর্চা যে পরিবেশে, তার সাথে ইংলিশ কন্ডিশনের কোনই মিল নেই। ওয়েদার, উইকেট কন্ডিশন সবই ভিন্ন এবং আমরা অনভ্যস্ত। সেই সফরে নিজেদের ইংলিশ কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে আমরা কয়েকটি ট্যুর ম্যাচ খেলেছিলাম। ইংলিশ কাউন্টি টিমগুলোর সাথে সে সব তিনদিন চারদিনের ম্যাচগুলোয় মুশফিক কিন্তু বেশ ভাল খেলেছিল। আমরা নেটে ও মাঠে দেখলাম ছেলেটা টেকনিক্যালি খুব সাউন্ড ও স্ট্রং অ্যান্ড মেন্টালি বেশ টাফ। প্র্যাকটিস ম্যাচে কাউন্টি টিমের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিল।’
‘সেই সব কাউন্টি দলগুলোর সাথে ম্যাচে আমরা সবাই খেলেছিলাম। তবে ইংলিশ প্রচার মাধ্যম মুশফিককে নিয়েই মেতে উঠেছিল। মিডিয়ায় মুশফিকের টেকনিক নিয়ে বেশ কথা-বার্তা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, সে টেকনিক্যালি বেশ সাউন্ড। আনফরচ্যুনেটলি লর্ডস টেস্টের পর সে আহত হয়ে যায়। ওই সফরে আর খেলতে পারেনি। ওই সময় আমাদের মুশফিকের ব্যাটিংটা দরকার ছিল।’
‘পাইলট তখন কিপিং করলেও আমাদের একজন ব্যাটার দরকার ছিল। শুরুতেই বোঝা যাচ্ছিল যে, সে বাকিদের চেয়ে আলাদা। মানে টেকনিক্যালি ভিন্ন আদলের। মুশফিক কেমন? কতটা পরিশ্রমী, অধ্যাবসায়ী, ক্রিকেট যে তার ধ্যান-জ্ঞান, ক্রিকেটই তার ভাললাগা, ভালবাসা- এসব তখন বোঝা যায়নি। জানা হয়নি। সেটা জানা হলো, আরও পরে। ধীরে ধীরে। শুরুতে মুশফিককে নিয়ে একটাই কথা ছিল, যে এ ছোট-খাট গড়নের ১৭ বছরের কিশোর টেকনিকটা বেশ ভাল।’
‘আমার সাথে শ্রীলঙ্কায় সিরিজ খেলতে গেলো। তখন কিপার হিসেবে পাইলট বেস্ট। কিপার হিসেবে পাইলটকে বিট করে মুশফিক আসলে দলে আসতে পারতো না; কিন্তু যেহেতু হি ব্যাটেড সো ওয়েল, তাই পরের ট্যুরে মুশফিক দলে ঠাঁই পেলো ব্যাটার হিসেবে। ব্যাটিং দিয়েই টিমে ঢুকে গেল। খেলেও ফেললো।’
এআরবি/আইএইচএস