দ্বিতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ৯৩ রান। ৬৩ রানে এগিয়েছিলো প্রোটিয়ারা। টেম্বা বাভুমা ছিলেন ২৯ রানে। পতন ঘটেছিল ৭টি উইকেট। বাকি ৩ উইকেট নিয়ে আর কতদূরই বা যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা? ইডেন গার্ডেন্সের বাজে উইকেটে খুব বেশিদূর যাওয়ার কথা নয় সফরকারীদের।
তবুও ওই অবস্থা দেখে শনিবার দিনের কেলা শেষে ভারতের সাবেক ব্যাটার চেতেশ্বর পুজারা বলেছিলেন, ইডেন গার্ডেন্সের এই পিচে চতুর্থ ইনিংসে ১২০ রান তাড়া করাও কঠিন হতে পারে।
তার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেলো তৃতীয় দিন এসে। দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস ১৫৩ রানে শেষ হওয়ায় ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১২৪ রান। সেই রান তুলতেই কেঁপে গেল শুভোন গিলহীন ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপ। ৯৩ রানে শেষ হয়ে গেল ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। নিজেদের পছন্দের পিচে ৩০ রানে হেরে গেল গৌতম গম্ভীরের দল।
নিজেদের স্পিনারদের জন্য উইকেট বানিয়েও এত ছোট স্কোর তাড়া করে জিততে পারলো না। এই পরাজয়ের পর ভারতীয় ক্রিকেটে এখন চলছে তোলপাড়। ভারতীয়রাই এখন প্রশ্ন তুলছে, ইডেন এমন পিচ তৈরি করা হলো কেন? কেন ব্যাটারদের বধ্যভূমি তৈরি করা হলো ইডেন গার্ডেন্সে। কেন স্পিনারদের জন্য স্বর্গভূমি তেরি করেও ভারতীয় স্পিনাররা টেম্বা বাভুমার মত ব্যাটারকে ফাঁদে ফেলতে পারলো না?
ভারতীয় মিডিয়াগুলোই বলছে, কোচ গৌতম গম্ভীরই চেয়েছিলেন এমন উইকেট। যাদে কুলদিপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল এবং রবিন্দ্র জাদেজারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারে। কিন্তু সেই গম্ভীরই এখন নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বলছেন, ‘আমি চেয়েছিলাম এমন উইকেট, কিন্তু ক্রিকেটাররা কেন পারলো না?’
২০১০ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতের মাটিতে কোনো টেস্ট জিততে পারেনি। স্পিন দিয়েই বারবার প্রোটিয়াদের ঘায়েল করে ভারতীয়রা। এমনকি ভারতীয়রা স্পিন দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এত বেশি নাজেহাল করতো যে, তাদের স্টেডিয়ামকে আইসিসির পক্ষ থেকে ডিমেরিটস পয়েন্ট দেয়া হতো। বলা হতো, বিলো স্ট্যান্ডার্ড।
মুম্বাই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, হায়দরাবাদ কিংবা আহমেদাবাদ- প্রতিটি স্টেডিয়ামেই স্পিন সহায়ক উইকেট তৈরি করে ভারত। যেখানে প্রোটিয়ারা ১২০, ১৫০ কিংবা ১৭০ রানের মধ্যে প্যাকেট হয়ে যেতো ভারতীয় স্পিনের সামনে।
এবার স্পিনস্বর্গে নিজেরা লড়াই করতে স্পিন শক্তি নিয়েই ভারতে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কেশভ মাহারাজ, সিমন হারমারদের দিয়েই বাজিমাত করেছে তারা। যে গর্ত ভারতীয়রা খুঁড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফেলতে, সেই গর্তেই নিজেরা অকাতরে এসে জীবন বিলিয়ে দিলো। মাত্র ১২৪ রানও করতে পারলো না। অলআউট হলো ৯৩ রানে। যদিও শুভমান গিল ইনজুরির কারণে ব্যাট করতে পারেননি। এটাকে অনেকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে; কিন্তু তাতে কোনো লাভ হতো কি না সন্দেহ! কারণ, নিজেদের খোঁড়া গর্ত থেকে ভারতীয়দের মুক্তি মেলার কোনো সুযোগ ছিল না।
দুই ইনিংসেই ৪টি করে উইকেট নিলেন সিমোন হারমার। কেশভ মাহারাজ দারুণ ভূমিকা রাখলেন। মার্কো ইয়ানসেন, করবিন বোসরা পেস বোলিং করেও ইডেনের পিচ থেকে উইকেট নিলেন। কিন্তু যে টেস্ট মাত্র আড়াই দিনে শেষ হয়ে গেলো সেই টেস্টের শেষে চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়, ‘ডিয়ার ইন্ডিয়া! অপরের জন্য যে গর্ত খুঁড়লে, সেই গর্তেই তোমরা পড়েছো।’ সামনে আশাকরি, তাদের বোধোদয় হবে।
আইএইচএস/