ভূমিকম্প হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ধ্বংসাত্মক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। এগুলো জনবহুল এলাকায় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে এবং সুনামি ও ভূমিধসের কারণও হতে পারে। ভূমিকম্পের জন্য বেশ কয়েকটি কারণ দায়ী, যেমন- টেকটোনিক প্লেট, আগ্নেয়গিরিতে চৌম্বুকীয় পদার্থের চলাচল, তাপমাত্রা বা পানির চাপের ওঠানামা এবং তীব্র বাতাস। যদিও ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে এমন কিছু ব্যবস্থা আছে যার মাধ্যমে যখন ভূমিকম্প হয় তখন আমরা নিজেদের কিছুটা নিরাপদ রাখতে পারি।
ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বসবাস করা মানেই প্রতিদিন ভূমিকম্প হবে বিষয়টা এমন নয়। তবুও বাড়িতে জরুরি সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হয় এবং পরিবারকে দুর্যোগ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত রাখতে হবে। পরিস্থিতি খারাপ হলে জরুরিভাবে অন্যত্র নিরাপদে আশ্রয় নিতে হবে।
ভূমিকম্পের সময় আপনার আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা এই শক্তিশালী প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি এবং বিঘ্ন কমাতে পারে। আপনি যদি সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশে বাস করেন তাহলে সব সময় প্রস্তুত থাকা আপনাকে এবং আপনার প্রিয়জনদের রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এখন আমরা জানবো বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ কোনগুলো?
জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশের তালিকায় শুরুতেই রয়েছে জাপান। প্রশান্ত মহাসাগরের চারপাশে অবস্থিত ভূমিকম্পের দিক থেকে সক্রিয় অঞ্চল-প্রশান্ত মহাসাগরের আবর্তে অবস্থিত জাপান, বিশেষ করে টেকটোনিক কার্যকলাপ এবং ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করেছে, যা ক্ষুদ্রতম ভূমিকম্পও শনাক্ত করতে সক্ষম। দ্বীপরাষ্ট্রজুড়ে কৌশলগতভাবে স্থাপন করা এক হাজারের বেশি সিসমোমিটারের মাধ্যমেই ভূমিকম্প শনাক্ত করা হয়। গবেষকরা দেখেছেন যে বেশিরভাগ ভূমিকম্পই ছোট এবং বাসিন্দাদের নজরে পড়ে না। যদিও মাঝে মাঝে বড় ভূমিকম্প হয়, যা ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
জাপান আসন্ন ভূমিকম্প সম্পর্কে বাসিন্দাদের অবহিত করার জন্য দেশব্যাপী একটি সতর্কতা ব্যবস্থাও পরিচালনা করছে যেন সবাই প্রস্তুত থাকতে পারে।
ইন্দোনেশিয়াইন্দোনেশিয়ায় প্রায় প্রতি বছরই ৬ মাত্রার চেয়ে বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে। সে কারণেই বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। ২০১৮ সালে ৬ মাত্রার চেয়েও বেশি নয়টি ভূমিকম্পের আঘাতে দেশটিতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অব ফায়ারে অবস্থানের কারণে, ইন্দোনেশিয়া আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ, খরা, বন্যা এবং সুনামির ঝুঁকিতে রয়েছে।
চীনচীনে ভয়াবহ ভূমিকম্পের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এসব ভূমিকম্প হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ২০০৮ সালে দেশটির সিচুয়ান প্রদেশে ৭.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং ৮৭ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায় বা নিখোঁজ হয়। এটি ছিল একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প।
চীন বিভিন্ন কারণে ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। এটি একাধিক সক্রিয় টেকটোনিক প্লেটের উপর অবস্থিত যা ক্রমাগত একে অপরের সঙ্গে ঘর্ষণ হচ্ছে যা পৃথিবীর ভূত্বকের ওপর চাপ তৈরি করছে। তাছাড়া চীনে অসংখ্য পাহাড়ি এলাকা রয়েছে যেখানে ভূমিধস এবং ভূতাত্ত্বিক ঘটনাপ্রবাহের ঝুঁকি রয়েছে, যা প্রতিবেশী অঞ্চলেও ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে।
ফিলিপাইনপ্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অফ ফায়ারের পাশে অবস্থিত ফিলিপাইন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। এর পাহাড়ি ভূখণ্ড ভূমিকম্পের সময় মারাত্মক ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া টাইফুন এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় প্রায়ই এই অঞ্চলে আঘাত হানে। এই ক্রমাগত এবং তীব্র প্রাকৃতিক বিপদের কারণে অনেক বাসিন্দা নিজেদের রক্ষা করার জন্য মজবুত ভবন নির্মাণের মতো সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
ইরানইরান বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ, যেখানে বছরের পর বছর ধরে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে। এসব ভূমিকম্প হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। বিভিন্ন প্লেট সীমানা এবং ফল্ট লাইনের সঙ্গে এর অবস্থানের কারণে, ইরানে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে।
ইরানে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে একটি ছিল গিলান প্রদেশে। ১৯৯০ সালে ওই ভূমিকম্পে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ভূমিকম্পের ভয়াবহ ট্র্যাজেডি সত্ত্বেও, ইরানিরা সুন্দর এই দেশটিতে বসবাস করেন কারণ তারা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় তা এরই মধ্যে জেনে গেছেন এবং সচেতন হয়েছেন।
সূত্র: ওয়ার্ল্ডঅ্যাটলাস.কম (৩১ জুলাই, ২০২৫ সালের প্রতিবেদন থেকে)
টিটিএন