আইন-আদালত

ইনুর আবেদনে জুলাই বিপ্লবকে ‘সো-কল্ড’ বলা রাষ্ট্রদ্রোহিতা

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনে জুলাই বিপ্লবকে ‘সো-কল্ড’ বা তথাকথিত বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুনর্বিবেচনার আবেদনে ইনু জুলাই বিপ্লবকে ‘সো কল্ড’ (তথাকথিত) বলার চেষ্টা করেছেন, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন বাতিলের আরজি জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর এমন কথা বলেন।

এর আগে গত ২ নভেম্বর এ মামলায় ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তারপর সেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন আসামি হাসানুল হক ইনুর আইনজীবী। সেই পুনর্বিবেচনার আবেদন নির্ধারিত দিনে বাতিলের আরজি জানান চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

ট্রাইব্যুনাল–২ এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার খারিজ করে আদেশ দেন। এখন মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনে ইনু জুলাই বিপ্লবকে ‘সো-কল্ড’ জুলাই বিপ্লব বলার চেষ্টা করেছেন, এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এটা (জুলাই বিপ্লব) বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় বিপ্লব।

এই বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের চেপে বসা স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। রাষ্ট্রে স্বভাবসুলভ গণতান্ত্রিক চরিত্র ফিরে এসেছে। রাষ্ট্র এখন সংস্কারের মাধ্যমে নতুন যাত্রার দিকে যাচ্ছে। এটাকে সো কল্ড বলাটা ধৃষ্টতা।

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনে ইনু আরও বলার চেষ্টা করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করেছে, এটা করার নাকি এখতিয়ার নেই। এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা। কারণ, বর্তমান সরকার অভূতপূর্ব বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতায় এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। এই সরকারের আইন প্রণয়নেরও ক্ষমতা আছে। এটা অবৈধ বলার দুঃসাহস দেখানোটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা।

ইনুর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রসঙ্গটিও এসেছে উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সরকার নাকি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন নিষ্ঠুরতার ঘটনাকে দায়মুক্তি দিয়েছে, যা ব্লাটান্ট লাই (স্পষ্ট মিথ্যা)। এ রকম কোনো দায়মুক্তি দেওয়া হয়নি।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে হাসানুল হক ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, তিনি এ বিষয়ে আদালতে শুনানির সময় কথা বলবেন। গণমাধ্যমে কথা বলতে পারবেন না।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে যেসব আইনসম্মত সংজ্ঞা বা উপায় আছে সেসব অবশ্যই করা যাবে। কিন্তু কোনো বিচারপ্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করা তথা আজকের রাষ্ট্রটা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, সেটা জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত আরেকটি বাংলাদেশ। সে মহান অর্জনের পেছনে ১৪০০ মানুষের রক্তদান, ২৫ হাজারের মতো মানুষের অঙ্গহানি ও অজস্র মানুষের চোখের পানি ঝরেছে। সেই মহান অভ্যুত্থান বা বিপ্লবকে সো-কল্ড বলা ধৃষ্টতা। এটা আদালত অবমাননা। এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এ ধরনের কথা আদালতে বলার অধিকার কোনো আসামিরই নেই।

তাজুল ইসলাম বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল সংবিধানের অধীনে প্রতিষ্ঠিত আদালত। এই ট্রাইব্যুনালের আইনটি বিশেষ আইন ও সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। অতএব এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে দাঁড়িয়ে কোনো কথা বলার অধিকারই আসামির নেই। তবে আইনের পরিকাঠামোর মাধ্যমে যেসব অধিকার রয়েছে তা অবশ্যই পাবেন (আসামি)। অর্থাৎ নিজের পক্ষে সাক্ষ্য উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন। প্রসিকিউশনের উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভুলত্রুটি চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন। এসবের ব্যাপারে পাল্টা যুক্তিও দেওয়া যাবে। কিন্তু আইনকে বা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার অথরিটি বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের নেই।

এদিন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বা বিচারের আদেশের বিরুদ্ধে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর রিভিউ আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। অন্য সদস্য হলেন জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এর পরে ইনুর বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সোমবার (১ ডিসেম্বর) দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। আদালতে এদিন ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও আইনজীবী সিফাত মাহমুদ।

গত ২৭ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে সো-কল্ড বলে বিচার শুরুর আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ করেন ইনু। তবে তার এমন মন্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আবেদনটি বাতিল চান প্রসিকিউশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনটি খারিজ করেন ট্রাইব্যুনাল-২।

এফএইচ/এসএনআর/জেআইএম