মেহেরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তালা লাগিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে জেলার ৩০৮টি বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস ও বার্ষিক পরীক্ষা চললেও শিক্ষকদের এ কর্মসূচির কারণে সেটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙে পড়ে এবং অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়।
সকাল থেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দেখা যায়, ক্লাস শুরুর আগে সহকারী শিক্ষকরা মূল ফটক, অফিসকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষে একে তালা দেন। ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে বিদ্যালয়ে এলেও তাদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। পরে শিক্ষকরা জানিয়ে দেন পরীক্ষা হবে না। বাড়ি ফিরে যেতে হবে। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
মেহেরপুর গাংনী উপজেলার অভিভাবক আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, দাবি-দাওয়ার নামে শিক্ষকদের হঠাৎ কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের ‘জিম্মি’ করে ফেলেছে। বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বছরের সমাপনী পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষক মহসিন আলী জানান, সরকারের পূর্ব ঘোষিত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, দশম গ্রেডে বেতন প্রদান, পদোন্নতি কাঠামো পুনর্বিন্যাস এবং সহকারী শিক্ষকদের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত দায়িত্ব কমানো।
এদিকে বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষকরা পড়েছেন সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
মেহেরপুরের গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ সাজ্জাদ রাজা জানান, ‘গত দুদিন অভিভাবকদের সহায়তায় আমরা পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। সহকারী শিক্ষকরা দায়িত্বে না থাকায় নৈশ প্রহরীকেও সাহায্য করতে হয়েছে। কিন্তু আজ ক্লাসরুমে তালা লাগিয়ে দেওয়ায় আমরা সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছি।’
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম জয়নুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি যেন না হয়, সেদিকে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
আসিফ ইকবাল/আরএইচ/এএসএম