আন্তর্জাতিক

মধ্যরাতে ট্রাম্পের ১৬০ পোস্ট, সকালে ‘ঝিমালেন’ ক্যাবিনেট মিটিংয়ে

মধ্যরাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় ১৬০টিরও বেশি পোস্ট ও রি–পোস্ট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পরদিন সকালে ক্যাবিনেট মিটিংয়ে তাকে একাধিকবার ঝিমাতে দেখা গেছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়।

গত সোমবার (১ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ট্রুথ সোশ্যালে প্রায় প্রতি মিনিটে একটি করে পোস্ট দিয়েছেন ট্রাম্প। ডেইলি বিস্ট জানায়, ৭টা ৯ মিনিট থেকে ১১টা ৫৭ মিনিট পর্যন্ত তার পোস্টের বন্যা এমন গতিতে চলছিল যে, কখনো কখনো এক মিনিটেরও কম সময়ে একাধিক পোস্ট আপলোড হয়েছিল। এসব পোস্টের মধ্যে ছিল নানা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আই) তৈরি ভিডিও এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ।

বিজ্ঞাপন-ঘেরা এসব পোস্টে তিনি অভিবাসন নীতি, জো বাইডেনের অটোপেন দিয়ে সই করা সব নির্বাহী আদেশ বাতিলের নির্দেশ এবং নিজের প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা তুলে ধরেন।

রেকর্ড ভাঙার ইতিহাস

ট্রাম্পের এ ধরনের আচরণ নতুন নয়। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফার চার বছরের মেয়াদে তিনি ১১ হাজারের বেশি টুইট করেছিলেন, যার বেশির ভাগই ছিল আক্রমণাত্মক।

২০২০ সালের জুনে দেশজুড়ে পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় ট্রাম্প এক দিনে ২০০ টুইট ও রি–টুইট করে নিজের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েন। এর আগের রেকর্ড ছিল তার সিনেট অভিশংসন বিচারের সময়—১৪২টি পোস্ট।

সোমবার রাতের ১৬০ পোস্টও তার ক্যারিয়ারের শীর্ষ তিনের মধ্যে পড়ে না। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি করেছিলেন ১৬১টি পোস্ট।

এদিন রাতভর পোস্ট করেও ট্রাম্প ক্ষান্ত দেননি। পরের দিন ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটেই প্রথম পোস্ট করেন। এতে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রশংসা করে বলেন, ‘ট্রুথ সোশ্যালই সেরা। অন্য কিছু এর ধারেকাছেও নেই!’

ক্যাবিনেট মিটিংয়ে ‘ঝিমুনি’

মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাবিনেট মিটিংয়ের শুরুতে ট্রাম্প যথারীতি জো বাইডেনকে উদ্দেশ করে ‘স্লিপি জো’ মন্তব্য করেন এবং দাবি করেন, ‘আমি ২৫ বছর আগের চেয়েও তীক্ষ্ণ।’

নিউইয়র্ক টাইমস তার শারীরিক ও মানসিক ধীরগতি নিয়ে সম্প্রতি যে বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটাও তিনি আক্রমণাত্মক ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেন।

কিন্তু মিটিং চলাকালে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। পরবর্তী দেড় ঘণ্টা ধরে তাকে বারবার চোখ বন্ধ করতে, মাথা কাত করতে এবং দীর্ঘক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।

কিছু মুহূর্তে তিনি ১০–১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত চোখ বন্ধ রেখেছিলেন, যা অনেকের কাছে মনে হয়েছে ‘দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ার’ মতো দৃশ্য।

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক যখন ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রশংসা করছিলেন, তখনই তার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসে। শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের বক্তব্য চলাকালে ট্রাম্পকে প্রায় জমে থাকা অবস্থায় চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখা যায়।

দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে তিনি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর পাশে বসেছিলেন, তখন তার চোখ বন্ধ থাকার দৃশ্য আরও স্পষ্টভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

কী বলছে হোয়াইট হাউজ

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট পুরো তিন ঘণ্টার মিটিং মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি দাবি করেন, ট্রাম্প এ বছর নয়টি ক্যাবিনেট মিটিং করেছেন এবং শেষের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি ‘শক্তিশালীভাবে’ ডেমোক্র্যাটদের ও সোমালি অভিবাসীদের সমালোচনা করেছেন।

সূত্র: টাইম, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএনকেএএ/